দুর্ঘটনা
সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতে হবে

ভাস্কর রাসা
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
সড়কপথের জন্ম কখন? সঠিক দিনক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা যায়, গুহাচারী মানুষের কাল থেকে সড়কের জন্ম। পরবর্তী সময়ে সড়ক উঠে গেল আকাশে অর্থাৎ বিমানচালকও একটি ভাসমান সড়ক ধরে গন্তব্যে যাত্রা করেন। এখন চাঁদে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে; মঙ্গল গ্রহে সড়ক নির্মাণসামগ্রী নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। ভবিষ্যতে মহাকাশে ভাসমান শহর গড়ে উঠবে; সেখানেও সড়ক থাকবে। আদিকাল থেকে মানুষ ভূগর্ভস্থ সড়ক ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, জনগণও একটি জনসড়ক ধরেই গন্তব্যে যাত্রা করে। ধারণা করা যায়, এই সম্প্রসারণশীল মহাজগতে সড়ক ধাবমান। সড়ক দুর্ঘটনা তো প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দেশের কোথাও না কোথাও।
প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। অনেকে আহত, পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে চিরতরে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ অদক্ষ চালক ও অতি মুনাফালোভী অধিকাংশ মালিক। সেই সঙ্গে রয়েছে সড়ক বিভাগে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের উদাসীনতা ও অযোগ্যতা; প্রশিক্ষণের অভাব ও আইনি সীমাবদ্ধতা; সড়কে চাঁদাবাজি। অনেক শ্রমিক নেতার একগুঁয়েমির জন্য সময়োপযোগী আইন প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। রাতে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ গাড়ির হেডলাইট। এ হেডলাইটের আলো বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
হেডলাইটের ওপরের অংশে যদি কালো রং বাধ্যতামূলক করা যায়, তবে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না এবং দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। দুর্ঘটনার আরও একটি কারণ আঁকাবাঁকা সড়ক। যতটা সম্ভব সোজাভাবে সড়ক তৈরি করতে পারলেও দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। সড়কে বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সেই সঙ্গে সড়কে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের রং। দিন ও রাতে আলাদা রং ব্যবহার হয়। এসব ব্যবহার যথাস্থানে হচ্ছে কিনা নিয়মিত তদারক করা জরুরি এবং যতটা সম্ভব সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা। প্রতিটি জেলায় সিসি ক্যামেরা তদারকি টিম থাকা প্রয়োজন।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলতে না দেওয়া এবং গরু-ছাগল চিনলেই চালককে লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। প্রতিটি মানুষের জীবনই অমূল্য। দক্ষ চালকের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। গাড়ি চালানো একটি দায়িত্বশীল কাজ। চালকের অদক্ষতার কারণে অনেকের জীবনহানি হচ্ছে। তাই জাতীয়ভাবে সুন্দর করে গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা উচিত। উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভাবে অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে প্রতিটি চালকেই নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন। এতে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সময়োপযোগী আইন বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চাঁদাবাজি একটি পুরোনো সমস্যা। দিন দিন তা সম্প্রসারিত হচ্ছে। কত কলাকৌশলে যে সড়কে চাঁদাবাজি চলে তার ইয়ত্তা নেই। চাঁদাবাজির টাকা কোথায় যায়? কারা পায়? ধরা যাক শ্রমিক কল্যাণের টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা কি সেই কল্যাণ ফান্ডের টাকা যথাযথ পাচ্ছেন?
করোনা মহামারির সময় বেকার শ্রমিকদের আহাজারি বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের বিস্তারিত বিবরণ কি বার্ষিক ভিত্তিতে জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কখনও? আট ঘণ্টার বেশি কোনো চালকই গাড়ি চালাতে পারবেন না– বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রত্যেক চালকের ছয় মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গবেষণার জন্য কি অর্থ বরাদ্দ রাখে? দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত ও আহতদের জন্য কি বরাদ্দ আছে মন্ত্রণালয়ের? স
ড়কে বাজার-হাট বসানো জরুরি ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। এসব অবৈধ বাজার-হাট অনেকাংশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়কপথ দেশের অন্যতম একটি সম্পদ, যা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি। পিচঢালা পথ অনেক দিনের। এখন সিমেন্ট দিয়ে, বালু-পাথর দিয়ে সড়ক বানানো হচ্ছে। পরিবেশের ভয়ংকর শত্রু পলিথিন বা বিভিন্ন বর্জ্য দিয়ে কি সড়ক বানানো যেতে পারে? এগুলোর সঙ্গে আরও কিছু সংযুক্ত হতে পারে। আরেকটি কথা, ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে ১২ মাসই আমরা সূর্যের আলো পাই; যা অনেক দেশেই কল্পনাতীত। ইতোমধ্যে দেশের অনেক স্থানে সৌরবিদ্যুতের বহুমাত্রিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। সারাদেশে সড়কগুলোতে সৌরবাতি ব্যবহার করা যায়। সড়কে পর্যাপ্ত আলো থাকলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।
ভাস্কর রাসা: ভাস্কর্য শিল্পী
- বিষয় :
- দুর্ঘটনা
- ভাস্কর রাসা
- সড়কে মৃত্যুর মিছিল