ঢাকা সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

বগুড়ায় শ্রমের হাটে কাজের আকাল

বগুড়ায় শ্রমের হাটে কাজের আকাল

বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় শ্রমিকহাটে কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন শ্রমজীবীরা। শনিবারের ছবি: সমকাল

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০০:০৮

কোদাল ও টুকরি (ঝুড়ি) নিয়ে ফজরের নামাজের পর বের হন হাফিজার রহমান। হেঁটে ও কিছুটা গাড়িতে ৩৫ টাকা খরচে এক ঘণ্টায় তিনি বগুড়া শহরের নামাজগড়ের শ্রমের হাটে পৌঁছান। শুক্রবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাজ মেলেনি। হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান কাহালুর মুরইল গ্রামের এ বাসিন্দা।

হাফিজারের মতো নন্দীগ্রামের মালঞ্জা থেকে আসা আবদুর রশিদ, সদরের নামুজার মোখলেছার রহমানসহ শতাধিক শ্রমিককে কাজের জন্য বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু গেরস্তের দেখা মেলেনি। শ্রমিক নিতে যা দু-একজন আসছেন, ১০-১২ জন ঘিরে ধরে নিজেকে নিতে অনুরোধ করছেন।

হাফিজার রহমান বলেন, কৃষিকাজ করি। গ্রামে এখন কাজ নেই। এ জন্য পান্তা ভাত খেয়ে শহরে বাসাবাড়িসহ অন্যান্য কাজের সন্ধানে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও কাজ পেলাম না। আসতে ও যেতে ৭০ টাকা খরচ। এখন তিন সন্তানের খাবার জুটাতে ধারদেনা করতে হবে। এভাবে আর পারছি না।

আরেক শ্রমিক আবদুর রশিদ জানান, বাসাবাড়ি সংস্কারের কাজ করেন তিনি। শুক্রবার চাহিদা বেশি থাকায় এ হাটে আসেন। কিন্তু কয়েক মাস হলো কাজ মেলে না বললেই চলে। বছরখানেক আগেও হাটে শ্রমিক থাকত বড়জোর ৩০ জন। এখন শতাধিক হলেও গেরস্ত হাতেগোনা।

আবদুর রশিদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক ব্যক্তি এলে তাঁকে ঘিরে ধরেন অন্তত ১২ শ্রমিক। ফলে কাকে নেবেন, দ্বিধায় পড়ে যান তিনি। শহরের কাটনারপাড়া এলাকা থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অনেক কাজ করানো দরকার। কিন্তু টাকা নেই। বৃষ্টিতে বাড়িতে পানি জমেছে। সরাতে কমপক্ষে দু’জন শ্রমিক দরকার। সামর্থ্য না থাকায় দিনমজুরিতে ৪৫০ টাকায় একজনকে নিলাম। একই কথা জানান, বাড়ির ড্রেন পরিষ্কারের জন্য শ্রমিক নিতে আসা শহরের সূত্রাপুর এলাকার মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ড্রেন পুরোনো হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। নতুন ড্রেন করতে হলে অনেক টাকা দরকার। আপাতত হাতে টাকা নেই বলে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।’

শ্রমের হাটে আসা শ্রমিক মোখলেছার রহমান বলেন, এক বছর আগেও হাটে শ্রমিকের চেয়ে গেরস্তের ‌আনাগোনা বেশি ছিল। কোনোদিনই বসে থাকতে হয়নি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে ৫০০ টাকা মজুরি পেয়েছি। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত করলে আরও ২০০ টাকা মিলেছে। এখন বাড়তি দূরে থাক, সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন বেকার কাটাতে হচ্ছে। আসলে সবকিছুর দাম বেশি। অন্যদিকে মানুষের হাতে টাকা নেই। এ জন্য সবাই দরকারি বিষয়েও কাটছাঁট করছেন।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক কে জি এম ফারুক হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকের জন্য সারা বছরের কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ কাজ না থাকলে তারা বিভিন্ন এনজিও ও দাদন কারবারি থেকে চড়া সুদে ধার নিয়ে খেয়ে ফেলেন। পরে এ ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে নির্যাতিত হন। অনেকে আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নেন।’

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন জানান, নামাজগড়ের শ্রমের হাট সম্পর্কে তাঁর তেমন জানা নেই। এক দিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে কিছু করা যায় কিনা, তা দেখবেন বলে জানান।

আরও পড়ুন