এক উপজেলায় দুই পৌরসভা ইউনিয়নবাসীর বিক্ষোভ

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
মাত্র ৯ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে চাঁদপুরে যাত্রা করতে যাচ্ছে একটি পৌরসভা। এর নাম নারায়ণপুর পৌরসভা। ১৩ বছর আগে করা মামলার চূড়ান্ত রায়ে এটিকে পৌরসভা হিসেবেই বহাল রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর এ রায় দেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রথম থেকেই নারায়ণপুর পৌরসভার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এলাকাবাসী। এর কারণ মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে উপজেলা শহর ও ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় মতলব পৌরসভা।
একই উপজেলায় ২৪ গ্রাম নিয়ে গঠিত নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা করাকে মানতে পারছেন না তারা। যেখানে শতভাগ কৃষক পরিবার, সেখানে পৌরসভা ঘোষণাকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা মনে করছেন অনেকে। কারণ এতে পৌরকরসহ বিভিন্ন খরচ বাড়বে তাদের। পৌরসভা নিজেও হবে ফতুর। কারণ কাঙ্ক্ষিত আয় করতে পারবে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাঁদপুরের সাবেক এক মন্ত্রীর ডিও লেটারের সুবাদে নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ১৩ অক্টোবর উচ্চ আদালতে রিট করেন ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার। সেই রিটে তিনি ছাড়াও বাদী ছিলেন ২০ জন। এরপর নারায়ণপুর পৌরসভার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আবারও পৌরসভার পক্ষে ওই ইউনিয়নের আবু তাহের মিয়াজী, জিলন পাটোয়ারী ও জাকির মজুমদার উচ্চ আদালতে রিট করেন। এই রিটের শুনানিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও রাজিক আল জলিলের যৌথ বেঞ্চ নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রাখার রায় দেন। এই রায় বাতিল চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণে রাস্তায় নেমে পড়েছেন ইউনিয়নবাসী।
গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত পয়ালি বাজারে রাস্তায় জড়ো হয়ে পৌরসভা বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ করেন নারায়ণপুর ইউনিয়নবাসী। কথা হয় নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা লোকমান হোসেন, আবু বকর, শিল্পী বেগম, রুমা বেগম, নূরুল ইসলামসহ অনেকের সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ইউনিয়নকে পৌরসভা করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি চক্র। বিক্ষুব্ধ একজন বলেন, ‘আপনি কী শুনছেন, বাংলাদেশের কোনো একটা উপজেলায় দুইটা পৌরসভা আছে? যদি থাকে, নাম বলেন।’ এই কথার সত্যতা পাওয়া গেল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পৌরসভার হিসাবে। সেখানে নারায়ণপুর ছাড়া মোট পৌরসভা ৩৩০টি। যেগুলো এক উপজেলায় একটিই। বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় পৌরসভাই নেই।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, এখানে কৃষি জমি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। শুধু শুধু করের বোঝা ইউনিয়নবাসীর ঘাড়ে চাপাতে কিছু লোক পৌরসভা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আছে। তবে জনগণ যদি চায়, তাহলে আমি ছাড়া অন্যরাও যেতে পারেন। আমি গেলে জনস্বার্থ, সমর্থন বিবেচনা করেই যাব।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মোস্তফা ২০০৩ সালে বিএনপির হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য মায়া চৌধুরীর হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। সেই থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে থাকে।
জহিরুল মোস্তফার ভাষ্য, আবু তাহের মজুমদার ও জাকির মজুমদার নামে যে দু’জন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যোগ দেন, তাদের পেছনে উপজেলা চেয়ারম্যান কলকাঠি নেড়েছেন। আর নারায়ণপুর পৌরসভা হওয়ায় তিনি (কবির আহমেদ) এখানকার মেয়র প্রার্থী হতে পারছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বি এইচ এম কবির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নারায়ণপুর পৌরসভা হিসেবে উন্নীত হয়েছে, এটি আমার কাছে আনন্দের সংবাদ। এলাকাবাসীও খুশি। খুশি না শুধু ইউপি চেয়ারম্যান। কারণ তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২০ বছর, আরও থাকতে চান।’
- বিষয় :
- চাঁদপুর
- নারায়ণপুর পৌরসভা
- মতলব পৌরসভা