ঢাকা সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

‘এখনও বুকটা কেঁপে ওঠে’

‘এখনও বুকটা কেঁপে ওঠে’

ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই আওলিয়া ঘাট পার হন বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ - সমকাল

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

পঞ্চগড়ের বোদায় ভয়াবহ নৌকাডুবির এক বছর আজ। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে।
বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়া পূজায় যাচ্ছিলেন নৌদুর্ঘটনার শিকার যাত্রীরা। এতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় নারী, শিশুসহ অন্তত ৭২ জন নিখোঁজ হন। ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও একজন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় এলাকা তথা সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ঘটনাটির কথা মনে হলে আজও শিউরে ওঠেন স্থানীয়রা। বরদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দির কমিটি সভাপতি নিতিশ কুমার বকশী মুকুল বলেন, ‘গত বছরও অনেক ভক্ত এসেছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক নৌদুর্ঘটনাটি এখনও আমাদের বেদনাবিধুর করে।’

উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের বটতলী এলাকার উজ্জ্বল কুমার রায় বলেন, ‘গত বছর ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় আমার বাবা-মাসহ পরিবারের ছয়জন মারা যান। এখন আফসোস করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। তবে আমরা ভেবেছিলাম, যাদের অবহেলায় ঘটনাটি ঘটেছে, তাদের বিচার হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’

ফুটকিবাড়ীর কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘আমার বড় ভাইসহ পাঁচজন নৌকাডুবিতে মারা যান।  চোখের সামনে এতগুলো মানুষ মারা গেল। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনও বুকটা কেঁপে ওঠে।’
নৌকাটিতে ছিলেন বড়শশী এলাকার তারা মিঞা। তিনি বলেন, ‘আমারও বাঁচার কথা ছিল না। ১৭-১৮ ঘণ্টা পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফেরে।’

স্থানীয়রা জানার, করতোয়া নদীর ওই নৌঘাটকেন্দ্রিক বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট, বড়শশী ও কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, ওই এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ।  

স্থানীয়দের ভাষ্য, দুর্ঘটনার পর পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এক জনসভায় যোগ দেন। এ সময় মন্ত্রী ঘোষণা দেন, তিন মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে। এ ঘোষণার পর গত বছরের ৭ অক্টোবর এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আওলিয়ার ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। ১ হাজার ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ইংরেজি ওয়াই আকৃতির সেতুর অ্যালাইনমেন্ট, ডিজাইনসহ ইস্টিমেট করা হয়। কথা ছিল গত ডিসেম্বরে সেতুর টেন্ডার হবে। এক বছরেও কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সমাজকর্মী মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আওলিয়ার ঘাটে একটি সেতু থাকলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।’

সেতুটি হলে এলাকাবাসীর কষ্ট কমে যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউপি চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম শামীম। তিনি বলেন, ‘সেতুর অভাবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয় এলাকাবাসীর। সেতুটি হলে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। নৌকাডুবির পর সেতুর মাপজোক হয়।’

পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান জানান, করতোয়া নদীর আওলিয়ার ঘাটে গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেতুটির টেন্ডার প্রসেস, ডিজাইনসহ সবকিছু কমপ্লিট হয়েছে। যেহেতু ব্রিজটির প্রাক্কলিত মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি; এজন্য মন্ত্রিপরিষদের ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির সভায় অনুমোদন নিতে হবে। সভায় অনুমোদন হলেই টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’

আরও পড়ুন