বেপরোয়া জনপ্রতিনিধিদের লাগাম টানবে কে

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
রাজশাহীর চারঘাটের ইউপি সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই এলাকায় হয়ে উঠেছেন মূর্তিমান আতঙ্ক। মাদকের কারবার, ভাতার টাকা আত্মসাৎ, সুদ বাণিজ্য, জমি দখলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। এলাকায় কায়েম করেছেন সালিশি রাজত্ব।
স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে অনিয়মের অভিযোগে ৫ জন ইউপি সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তাদের মধ্যে ইউসুফপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম মাদকসহ আটক হন। ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাসুদ রানা ও সংরক্ষিত নারী সদস্য সাগরী বেগম ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শলুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাহাবুর আলী প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন। চেক জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে সরদহ ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে।এ ছাড়া শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি আশরাফুল ইসলাম হেরোইনসহ আটক হয়েছেন। সরদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহাবুদ্দিন আলী অন্যের জমি নিজের লিখে নিয়ে মামলার আসামি হয়েছেন। তাদের বহিষ্কারের কার্যক্রম চলমান। আরও আটজন সদস্য মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছেন বলে জানা গেছে। শলুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল আলম সোহেলের ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি নন্দা কৃষি খামারের ৮ একর জায়গা দখল করে নিয়েছেন।
এদিকে বহিষ্কার করেও লাগাম টানা যাচ্ছে না ইউপি সদস্যদের। তারা নিজ এলাকায় বিচার-সালিশ এবং ভাতার তালিকা তৈরিসহ পরিষদের নানা কাজে সম্পৃক্ত থেকে অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন।
ইউসুফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আদুরী খাতুন ও শাহানাজ বেগম বলেন, ‘ভিডব্লিউবি চালের কার্ডের জন্য ইউপি সদস্য রবিউল ইসলামকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা দিয়েছি। জানতাম না তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তাঁর কাছে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’ তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, সাময়িক বহিষ্কার হলেও লোকজন এলে তাদের কাজ করে দিতে হয়।
একইভাবে বহিষ্কার হয়েও পরিষদের কাজে যুক্ত রয়েছেন শলুয়া ইউপি সদস্য সাহাবুর আলী। ভাতা ও কার্ডের কাজ তিনিই করেন। নিয়মিত বিচার-সালিশও করছেন। জানতে চাইলে সাহাবুর আলী বলেন, বহিষ্কার করলেও কিছুই যায় আসে না। আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিষদের ভাতা ও চাল বিতরণ করি। বিচার-সালিশও করতে পারি।
এ বিষয়ে শলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইউপি সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমি নিয়মের মধ্যে থাকলেও তাদের অনিয়মের কারণে পরিষদের বদনাম হয়।
ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পাঁচ ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দু’জনের তথ্য পাঠানো হয়েছে। বহিষ্কৃত জনপ্রিতিনিধিরা যাতে পরিষদের কাজে না জড়ায় বিষয়টি চেয়ারম্যান দেখবেন। এর পরও অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- বেপরোয়া জনপ্রতিনিধি
- লাগাম