আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় হয় নাই হবেও না, বললেন তাহেরপুত্র বিপ্লব

এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব
লক্ষীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:৫৮ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬:০৯
‘ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না’। নির্বাচনী গণসংযোগে এ কথা বলেছেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বহুল আলোচিত সাবেক মেয়র আবু তাহেরের ছেলে এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব। বক্তব্যটি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ারও করেছেন তিনি। প্রায় ১১ মিনিটের ভিডিওতে তার বক্তব্যের কিছু কথা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে আলোচনা এখন অনেকেরই মুখে মুখে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুর পক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে গণসংযোগের সময় তিনি বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি ওই ইউনিয়নের ভোটের মাঠে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে উপস্থিত থাকার কথা জানান। ভোটের দিনেও কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। যদিও তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা নন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন বিপ্লব। পরে রাষ্ট্রপ্রতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষা পান।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দাবি, বিপ্লব ওই এলাকায় বহিরাগত। তার এমন ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যে ভোটের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
তবে বিপ্লবের দাবি, দলীয় নেতা ভুলুর নির্বাচনী গণসংযোগে তিনি ওই এলাকায় যান। তার ওপর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন হামলা করায় তিনি রাগে ওই কথা বলেছেন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ ভয় পাবেন না। অল্প পানিতে মাছ তিরতিরাই। ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না। আমিও মানুষের ভালোবাসার জন্য দুয়ারে দুয়ারে হাঁটি। জনগণই বড় শক্তি। ভোটের মাধ্যমে মানুষ জবাব দেবে। আজকের হামলার ঘটনার জন্য একটা কথা বলি। আমি প্রত্যেকদিন একঘণ্টা করে এখানে আসবো। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ না হবে, কথা দিচ্ছি আমি এখান থেকে যাব না। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেব। আমি দায়িত্ব নিয়েছি, তেওয়ারীগঞ্জ আমি ছাড়বো না। ভোটের দিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকবো। আমি দেখবো কে কত বড় সন্ত্রাসী হয়েছেন। এটার জবাব ভোটের ব্যালটে দেব, ইনশাআল্লাহ। যে আচরণ করেছেন তা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেব।’
গণসংযোগে বিপ্লবের সঙ্গে প্রার্থী ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুও ছিলেন। প্রার্থী ভুলু বিপ্লবের ভগ্নিপতি (খালাতো বোনের স্বামী)। বিপ্লব সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বড় ভাই।
অভিযোগ উঠেছে, অটোরিকশা প্রতীকের প্রার্থী ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরীর লোকজন আনারস প্রতীকের প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা করে। ওই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিপ্লব রেগে যান। পরে তিনি উপস্থিত জনগণের সামনে মাইকে বক্তব্য দেন।
জানতে চাইলে এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি প্রতিযোগিতামূলক, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। তিনি চান ভোটে সৎ ও যোগ্য লোক নির্বাচিত হোক। তাহলে জনগণ সেবা পাবে ও সরকারের ভাবমূর্তিও বাড়বে। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি তেওয়ারীগঞ্জে ভুলু ভাইয়ের নির্বাচনী গণসংযোগে যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ গণসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। আমার গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এজন্য রেগে গিয়ে কথাগুলো বলেছি। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মতো কোনো উদ্দেশ্য নেই।
ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন বলেন, অটোরিকশার প্রার্থী বোরহান চৌধুরীর লোকজন আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। তখন বিপ্লবের গাড়িতে হামলা করা হয়। এতে বিপ্লব একটু রেগে গিয়ে বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন। হামলার ঘটনায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেব।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী বলেন, বিপ্লব বহিরাগত। তিনি ভুলুর গণসংযোগে এসে উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে স্থানীয় লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমার কোনো লোক তাদের ওপর হামলা করেনি। হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেব।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভুলু ও বোরহান ছাড়াও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নে আরও ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আল মাহমুদ ইবনে হুছাইন (মোটরসাইকেল), মনির মাহমুদ নোবেল (টেলিফোন), উসমান হোসেন (চশমা), মাহফুজুর রহমান (ঘোড়া), শাহেদা আক্তার (রজনীগন্ধা) ও সবুজ রহমান (ঢোল)।
আগামী ২৮ এপ্রিল তেওয়ারীগঞ্জসহ সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ, দালালবাজার, লাহারকান্দি ও দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী (সাবেক পিপি) নুরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। বহুল আলোচিত নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে তাহেরপুত্র বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। বিপ্লব ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর আবু তাহের তার ছেলে বিপ্লবের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) মো. জিল্লুর রহমান তার সাজা মওকুফ করেন। পরের বছর আরও দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ হত্যা মামলা থেকেও বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট কারাগারে থেকে বিয়ে করে দেশব্যাপী ফের আলোচনায় আসেন বিপ্লব। অবশেষে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি কারামুক্ত হন।
- বিষয় :
- লক্ষ্মীপুর
- হামলা
- নির্বাচন
- ইউপি নির্বাচন