দরিদ্রদের প্রকল্পে সচ্ছলরা

ম্যাপ
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ০৫:৪৩
অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ইউপি কর্মচারী ও সচ্ছল ব্যক্তিরা। প্রকল্পের কাজে আসছেন না তারা। যে কারণে দেওয়ানগঞ্জের চরআমখাওয়া ইউনিয়নে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দুটি প্রকল্প ঘুরে এবং ট্যাগ অফিসারের পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেওয়ানগঞ্জের আটটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানে ৫৩টি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এর মধ্যে চরআমখাওয়া ইউনিয়নে ১৬ এপ্রিল থেকে ৯টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট শ্রমিক ৪৬৩ জন। প্রত্যেক শ্রমিক ৪০০ টাকা দৈনিক হাজিরায় ৩৩ দিন কাজ করবেন।
সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া কারিমুদ্দিনের বাড়ি থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও সবুজপাড়া সাকোয়াতের বাড়ি থেকে সৈয়দ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত গাইড ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিক সংখ্যা ৫০। তবে গত সোমবার সরেজমিন পাওয়া গেছে ৩৫ জনকে। প্রকল্পের সর্দার জয়নাল আবেদীন বলেন, অনুপস্থিত শ্রমিকদের মধ্যে কিছু গ্রামপুলিশ ও ইউপি স্টাফ রয়েছেন। ওই দিন ৩৭ শ্রমিক কাজে আসেন বলে দাবি তাঁর। তবে ২২ এপ্রিল প্রকল্প পরিদর্শন করে গেছেন ট্যাগ অফিসার। পরিদর্শন বইয়ে ৩৫ শ্রমিকের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত ১৬ এপ্রিল সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়া কারিমুদ্দিনের বাড়ি থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও সবুজপাড়া সাকোয়াতের বাড়ি থেকে সৈয়দ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গাইড ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে তিন দিন ওই প্রকল্প পরিদর্শন করেন ট্যাগ অফিসার। পরিদর্শন বইয়ে তাঁর লেখা তথ্যমতে, ৫০ শ্রমিকের মধ্যে ১৭ এপ্রিল ৩৮ জন, ২১ এপ্রিল ৩৭ জন এবং ২২ এপ্রিল ৩৫ জন কাজ করেন। বাকিদের মধ্যে চারজন গ্রামপুলিশ ও দু’জন ইউপি তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা। কাজে আসেন না তারা।
এ ছাড়া সোমবার বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ পাটাধোয়াপাড়া ইছাহাক আলী মোল্লার বাড়ি থেকে উত্তর দিকে খলিল খন্দকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুর লতিফ জানান, শ্রমিকদের অন্য একটি রাস্তা (প্রকল্প নেই) মেরামতে পাঠিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ওই প্রকল্পে সাতজন শ্রমিক বরাবরই অনুপস্থিত। হাজিরা খাতায় তাদের অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে। তাদের নামে কোনো বিল দেওয়া হবে না।
ট্যাগ অফিসার আব্দুর রহমানের ভাষ্য, পাটাধোয়াপাড়া ইছাহাক আলী মোল্লার বাড়ি থেকে উত্তর দিকে খলিল খন্দকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ২১ এপ্রিল ২৩ শ্রমিক পাওয়া গেছে।
সবুজপাড়া গ্রামের শ্রমিক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আমরা কয়েকজন প্রতিদিন কাজে আসি। বাকি শ্রমিকরা কেন আসেন না তা জানি না।’
নারী শ্রমিক ঠিকমতো কাজে আসেন। অন্যদের কথা জানেন না সানন্দবাড়ী মধ্যপাড়া গ্রামের শ্রমিক আবুল হাসেন।
শ্রমিকের তালিকায় নাম থাকা ইউপি উদ্যোক্তা আপেল মাহমুদের ভাষ্য, ওই প্রকল্পে তাঁর নাম রয়েছে। প্রকল্প থেকে শ্রমিকের মজুরি পান তিনি।
প্রকল্পের সর্দার জয়নাল আবেদীন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চারজন কর্মচারী আছেন। আজ (২২ এপ্রিল) ৩৮ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। দু’জনের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। বাকি শ্রমিকদের বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের তালিকা আমরা করিনি। কোনো শ্রমিকের নাম বাদ দেওয়া বা সংযোগ করার সুযোগ আমাদের নেই।’
ট্যাগ অফিসার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, একটি প্রকল্পে চারজন গ্রামপুলিশ ও ইউপি তথ্যকেন্দ্রের দু’জন কম্পিউটার অপারেটর রয়েছেন। তাদের নাম কে বা কারা দিয়েছেন জানা নেই তাঁর।
প্রকল্পে শ্রমিকদের শতভাগ উপস্থিতি নেই কেন এবং শ্রমিকরা অনুপস্থিত কেন, তা প্রকল্প সভাপতির কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন চরআমখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এতগুলো প্রকল্প আমার একার পক্ষে প্রতিদিন পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। কোনো প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে দু-একজন শ্রমিক অনুপস্থিত পাওয়া যায়। তাপদাহের কারণে শ্রমিকদের উপস্থিতি কমেছে।
- বিষয় :
- জামালপুর