নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ
গ্যাস তিতাসের, বিল নেয় অন্যরা
সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী পশ্চিমপাড়ায় বৃহস্পতিবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিতাস কর্মীরা। ছবি: সমকাল
শাহজাহান জনি, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১১:১৬
সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। প্রতিটি বাড়ির চুলা হিসাব করে বিল আদায় করে নিচ্ছে তারা। এতে বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের। অভিযোগ উঠেছে, মোটা টাকার বিনিময়ে আবাসিক বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন বাড়িতে এভাবে সংযোগ দিচ্ছে চক্রটি।
চক্রের সদস্যদের পেছনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন ইন্ধন জোগাচ্ছেন– এমন তথ্যও এসেছে। যদিও ওই কাউন্সিলরের দাবি, ওই চক্রে জড়িত কাউকে তিনি চেনেন না।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ওই ওয়ার্ডের কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিরোধী অভিযান চালিয়েছে তিতাস গ্যাস। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলা অভিযানে ৪৮টি বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান অবৈধ সংযোগের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘কদমতলী পশ্চিমপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারি। প্রতিটি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক করে টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়েছে কিছু দালাল। তারা আমাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতি বাড়ির চুলা হিসাব করে মাসে মাসে বিল নিচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, চক্রটির সদস্যরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন।
একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তারা চলে গেলে রাতে ওই চক্রের সদস্যরাই স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে ফের সংযোগ দিয়ে দেয়। এ জন্য তাদের গুনতে হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
তিতাস গ্যাসের একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় তাদের বৈধ সংযোগ প্রায় ৩০ হাজার। এ ছাড়াও আনুমানিক ৫০ হাজার অবৈধ সংযোগের তথ্য রয়েছে। নানা কারণে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার যে ৪৮ বাড়ি থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে চক্রে জড়িত ব্যক্তিদের নাম পেয়েছেন তিতাস গ্যাস কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, চক্রে জড়িতরা হলো কদমতলী এলাকার জহির, তুহিন, জীবন, আলমগীর, সাইদুর রহমান সাজু, খায়ের, সুমন, দুলাল ও বাবুল ওরফে গ্যাস বাবুল।
এসব বিষয়ে জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, তাদের গোপন কারবারের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় পালিয়ে গেছে। কয়েকজনকে বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার মোবাইল ফোন নম্বরে দফায় দফায় কল দিলেও ধরেনি কেউ।
তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার থেকে জনসাধারণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হবে। এতেও বন্ধ না হলে পুরো এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মদ ইমরানের ভাষ্য, অভিযানে দেখেছেন কদমতলী পশ্চিমপাড়ায় শতকরা মাত্র ৫টি বাড়িতে গ্যাসের বৈধ সংযোগ রয়েছে। তারাও অনুমোদনের চেয়ে বেশি চুলা ব্যবহার করছেন। অনেকে দুয়েক বছর ধরে বিল দিচ্ছে না। এমন গ্রাহকের জন্য ৯৫ শতাংশ অবৈধ সংযোগ নেওয়া গ্রাহককে সুবিধা দেওয়া যায় না। অবৈধ সংযোগ চক্রের সঙ্গে তিতাস গ্যাসের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ অপকর্মে জড়িত হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেন নাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার কোনো লোক এসব কাজে জড়িত নয়।’
- বিষয় :
- নারায়ণগঞ্জ