ঢাকা সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহ নগরী

বর্ষায় কার্যকর কর্মসূচি নেই এবারও খেতে হবে হাবুডুবু

বর্ষায় কার্যকর কর্মসূচি নেই এবারও খেতে হবে হাবুডুবু

প্রতীকী ছবি

 মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১১:২৫

ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দাদের বছরজুড়ে ভোগান্তির নাম যানজট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্ষায় জলজট। এটি এখন নগরবাসীর দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা। সামান্য বৃষ্টি হলেই দুই-তিন দিন ধরে পানি জমে থাকে। জলমগ্ন থাকে নিম্নাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকা। এবার বর্ষা চলে এলেও পানি অপসারণের জন্য খাল সংস্কারের কর্মসূচি নেই। নালাগুলো পরিষ্কার ও সংস্কার শুরু হলেও আশা জাগাতে পারেনি কাজের অগ্রগতি। চলতি বছরও দিনের পর দিন হাঁটু ও কোমর সমান পানির নিচে থাকতে পারে অধিকাংশ এলাকা। কেউ কেউ হাবুডুবু খেতে পারে বুক সমান পানিতে।

নগরীর বলাশপুর এলাকাটি নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। বর্ষায় দীর্ঘ মেয়াদে ভোগান্তি পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। এ ছাড়া চরপাড়া, নয়াপাড়া, ধোপাখলা, আকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা এই মৌসুমের নিয়মিত সমস্যা। বলাশপুরের বাসিন্দা বাবলী আকন্দ বলেন, বৃষ্টির কারণে অন্তত ছয় মাস জলমগ্ন থাকতে হয়। এই ভোগান্তি কমাতে নালা নির্মাণের কাজ চললেও তা আশা জাগাতে পারেনি। এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা হবে না বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও নালা ও খাল সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। আর পানি দ্রুত অপসারণ না হলে জলজট নিরসন হবে কীভাবে?

নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির বাসিন্দা মুরাদ হোসেন কানন বলেন, ‘গত বর্ষার দুঃসহ ভোগান্তি এখনও ভুলতে পারিনি। এক দিন কোনোরকম বেশি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা থাকত দু-তিন দিন। একবার তো ভারী বর্ষণের কারণে টানা সাত দিন জলমগ্ন ছিলাম। এই ক’দিন বুক সমান পানিতে রীতিমতো হাবুডুবু খেতে হয়েছে। চলাফেরা বন্ধ ছিল। ভিজে নষ্ট হয়েছে টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং খাট, সোফাসহ দামি আসবাব। এ ছাড়া ভবনগুলোর নিচ তলার গ্যারেজে থাকা অধিকাংশ গাড়ি বিকল হয়ে যায়। সেই ভোগান্তি প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই এবারও দিনের পর দিন কোমর পানিতে ডুবে থাকতে হবে বলে আশঙ্কা করছি।’
পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, ‘শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে তিন দশক ধরে আন্দোলন করছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হলেও তাতে সাফল্য আসেনি। কেন প্রকল্পগুলো কাজে আসছে না, আর কী কারণে জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না– তা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। এর দায় তদারক সংস্থা সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। 

জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এর আওতায় প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার সড়ক, ৩৪৫ কিলোমিটার নালা (ড্রেন) ও প্রায় ১৭ কিলোমিটার ফুটপাত, সড়ক বিভাজক, ১৩টি কালভার্ট, ছয়টি ফুট ওভারব্রিজসহ বেশ কিছু কাজ রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকায় ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩ কিলোমিটার সড়ক ও ৮৯ কিলোমিটার নালা নির্মাণ হয়েছে। আরও ৮৫০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র দেওয়া হয়েছে। 
তবে কাজ শুরু করতে বিলম্ব, অপ্রতুল বরাদ্দসহ নানা কারণে প্রকল্পটির গতি ধীর বলে দাবি নগর কর্তৃপক্ষের। এ কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়াতে আগামী জুনের পর আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিঞা। 

খাল খননে আটকা সুফল 

নগরীর ভেতর দিয়ে সেহড়া খাল, মাকরজানি খাল, গোয়াইকান্দি খাল, বগামারি খাল রয়েছে। এই চার খাল শহরতলির আকুয়া খাল হয়ে সুতিয়া নদীতে মিশেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া, আবর্জনা ফেলা ও অবৈধ দখলের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। গত বছর বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতা নিরসনে সাময়িক সমাধান হিসেবে নগর কর্তৃপক্ষ ১৬ কিলোমিটার খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের বাধা দূর করে। কিছুদিন পর সেগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যায়। নগরীর খালগুলোর প্রবাহ না ফেরানো পর্যন্ত নালাগুলোর পানি অপসারণ হবে না। তাই যত প্রকল্পই নেওয়া হোক না কেন, খাল সংস্কারের বিকল্প নেই।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৫ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন ও সংস্কারে ২০২১ সালে ‘ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ৯০ লাখ টাকার চুক্তি হয়। গত বছর ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো সংস্কার কাজ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রায় ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকার এ প্রকল্প অনুমোদনের সম্ভাবনা নেই।

এদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে সিআরডিপি ফেইজ থ্রি প্রকল্পের আওতায় নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করার জন্য প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে খালগুলো সংস্কার, ওয়াকওয়ে তৈরিসহ রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ২০২৫ সালে এর কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী রফিকুল। তিনি বলেন, এলজিইডির প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগে নেওয়া প্রকল্প বাতিল হয়ে যাবে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, গত বছর রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে এক দফায় সাত দিন জলাবদ্ধতা ছিল। সে সময় সাময়িক সমাধান হিসেবে কিছু খাল খনন ও দখলমুক্ত করা হয়েছিল। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় এবারের বর্ষায়ও সেই পন্থা অবলম্বন করা হবে। তাই জলাবদ্ধতা তৈরি হবে না।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×