কর্মকর্তাদের ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায় করে তারা
গ্রেপ্তার দুই প্রতারক
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ২০:৪৮
সরকারি বড় কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি এবং প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নীলফামারী জেলার পাঁচরাস্তা এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দু’জন হলো নীলফামারী জেলা সদরের সরদারের মোড় এলাকার মো. মনোয়ার হোসেন বাবু ও সোনারায় উলটপাড়া এলাকার মো. শাহজালাল। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক শনিবার তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২০ এপ্রিল খুলনার বাংলাদেশ বেতারের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাঈদুজ্জামানকে মোবাইল ফোনে কল করে একজন নিজেকে বাংলাদেশ বেতার সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেয়।
তিনি আরও জানান, এর পর তাঁর কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলির হুমকি দিয়ে তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য টাকা দাবি করে। একইভাবে বেতারের খুলনা উপকেন্দ্রের ৯ জনকে ফোন করে এবং নগরীর দৌলতপুরে অবস্থিত পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শকের কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওই নম্বর থেকে কল করে টাকা চাওয়া হয়। এমনকি মুখ্য পরিদর্শক এ এম আক্তার হোসেনের কাছ থেকে প্রতারণা করে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাঈদুজ্জামান বিষয়টি জানালে সোনাডাঙ্গা থানা এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এক পর্যায়ে সাঈদুজ্জামান মামলা করলে পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে লোকজনকে ফোন করে অর্থ আদায় করে। তাদের তথ্য পাওয়ার মূল উৎস হচ্ছে সরকারি তথ্য বাতায়ন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পত্রিকার বিজ্ঞাপন এবং ভিজিটিং কার্ড। চক্রের সদস্যদের কেউ তথ্য সংগ্রহ করে, কেউ তথ্য বিশ্লেষণ করে। তারা যেসব সিম ব্যবহার করে, সেগুলো নিজেদের নামে রেজিস্ট্রেশন করা নয়।
এইচএসসি পাস মনোয়ার ফেনীতে বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করত। ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ বসবাস করত। এ সময় সে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। কৌশলে তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারণা চালিয়ে যেত। প্রথম দিকে নিজ এলাকার লোকজনকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করত। সে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা শুরু করে। সহযোগী হিসেবে এসএসসি পাস মো. শাহজালালকে সঙ্গে নেয়।
সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় মনোয়ারের নামে মামলা এবং রংপুর ও নীলফামারী এলাকায় নারী নির্যাতন, চুরি এবং মারামারির চারটি মামলা রয়েছে। শাহজালালের বিরুদ্ধে নীলফামারী সদর থানায় নারী নির্যাতনের মামলা ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলায় পাট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফেনীর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা এবং নোয়াখালীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের কাছে সচিব পরিচয় দিয়ে কল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারক চক্রে আর কে কে জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।