চেতনানাশক মেশানো খাবার খেয়ে অজ্ঞান, একাধিক বাড়িতে চুরি
ছবি:সমকাল
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ০২:০৭ | আপডেট: ১২ মে ২০২৪ | ০৩:১৬
ফরিদপুরে অজ্ঞান করে একাধিক বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। শহরের শোভা রামপুর ও ডোমরা কান্দিতে গত কয়েকদিনে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অসুস্থ প্রায় ২০ জনকে শহরের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, শহরের উপকন্ঠে ডোমরা কান্দিতে পরপর তিন রাতে তিনটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ওই এলাকার মৃত নেছার উদ্দিনের ছেলে মো. আবুল মন্ডল (৪৫) জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তার বাড়ির সবাই খাবার খাওয়ার মিনিট দশেক পরে অসুস্থ হয়ে যান।এর পর তাকেসহ তার স্ত্রী শিরিনা বেগম (৩৫), ছেলে সিয়াম (১৬) ও মেয়ে সিনহাকে (১২) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আবুল মন্ডল আরও বলেন, ‘সকালে বাড়ির পাশে ধান খেতে গেলে সেখানে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম। তাই বিশ্রাম নিতে বাড়ি এসে দেখি আমার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।এরপর অশেপাশের লোকদের ডাক দিলে তারা আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। এক রাত হাসপাতালে থেকে শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে ফিরে আসি।’
শিরিনা বেগম (৪০) বলেন, ‘সকালে রান্না করতে গিয়ে দেখি লবণে হলুদের মতো রঙ লেগে আছে।আর কেমন যেন পাউডারের মতো মেশানো কিছু। তবে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেইনি। ভেবেছিলাম বাচ্চারা লবণ দিয়ে আম মাখিয়ে খেয়েছে কিংবা আটা মাখিয়েছে হয়তো।’
এ ঘটনায় আবুল মন্ডল কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার রাতে ওই গ্রামের ওমর আলী (৪৭) নামে এক চা দোকানির বাড়িতে লুট হয়।
ওমর আলী বলেন, এক দল ডাকাত বাড়ির সবাইকে জিম্ম করে মারধর করে নগদ টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে গেছে। দু’জন ডাকাত প্রথমে এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা চালালে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। তাদের দলে ১০ জনের মতো ছিল। চারজন ছিল মুখোশ পরা।
এ ছাড়া দু’দিন আগে ওই গ্রামে সাজেদা বেগম (৫০) নামে এক নারীর বাড়িতে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। তারা জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সাজেদার হাত-পা বেঁধে রেখে টাকা-পয়সা ও সোনার গহনা নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সাজেদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাউকে দেখলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে উঠছেন বলে জানান তার বোন লাইলী বেগম।
এ দিকে শহরের শোভা রামপুরে শুক্রবার সকালে বাড়ির রান্না খাবার খেয়ে দু'টি পরিবারের ১৫ জন সদস্য অসুস্থ পড়েন।তাদের ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় ৬-৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ লাখ টাকা খোয়া গেছে।
ওই গ্রামের হৃদয় কুমার শীল (২২) জানান, শুক্রবার সকালে তার কাকা সুকুমার শীলের (৭০) বাড়িতে রান্না করা খাবার খেয়ে পরিবারের ৫ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন।তবে তার আগে শুক্রবার রাতে সুকুমার শীলের বাড়িতে নগদ টাকা ও মালামাল চুরির ঘটনা ঘটে।
হৃদয় জানান, শুক্রবার রাতে তার কাকা সুকুমারসহ পাশের উত্তম শীল (৪৫) ও কার্তিক শীলের (৫৪) বাড়ির রান্না ঘরে হলুদের সাথে কিছু মিশিয়ে রেখে ছিল কেউ। তবে অন্য দুই বাড়ির সদস্যরা উপোষ থাকায় তাদের বাড়িতে রান্না হয়নি।
এছাড়া শোভা রামপুর মহল্লার নিরোদ মন্ডল (৫২) নামে আরও এক ব্যক্তির বাড়িতে এভাবে খাবারের উপকরণে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে রাখা হয়।এরপর রান্না করা খাবার খেয়ে শুক্রবার সকালে নিরোদ মন্ডলের বাড়ির প্রায় ১০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে রাতে তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও লোকজন থাকায় কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, এমন একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অন্য ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি।