কাপ্তাই
‘লীগ’ সমর্থিত তিন প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ
প্রতীকী ছবি
নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ১৫:৩৬
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী (বেবী) (আনারস) কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাছির উদ্দিন (দোয়াত কলম) উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। সুব্রত বিকাশ তঞ্চংগ্যা (ঘোড়া) উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিনজনই আওয়ামী ঘরানার। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, কাপ্তাইয়ে এবার ‘তিন লীগ’ সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে।
আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য পদে চেয়ারম্যান ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২ মে রাঙামাটি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, নির্বাচনী এলাকাগুলোর বাজার, রাস্তাঘাট ও অলিগলি প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চায়ের দোকান কিংবা পাড়ায় পাড়ায় এখন আলোচনার মূল বিষয় শুধু নির্বাচন।
কয়েকজন ভোটার জানান, চেয়ারম্যান পদে সরকারদলীয় আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, মো. নাছির উদ্দিন ও সুব্রত বিকাশ তঞ্চংগ্যা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তাদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও কৃষক লীগ সমর্থিত প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আব্দুল হাই খোকন ও সুইপ্রু মারমার মধ্যে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফারহানা আহমেদ পপি ও বিউটি হোসেনের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের রাইখালী বাজারের বাসিন্দা সজল দে, ভালুকিয়ার অমিত তঞ্চংগ্যা, লেমুছড়ি পাড়ার সুচিং মারমা, কেপিএম এলাকার মো. ইনসান, রাবেয়া খাতুনসহ কয়েকজন ভোটার জানান, তারা সৎ, যোগ্য এবং সবসময় জনগণের পাশে থাকবেন, এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন এমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক ছাত্রনেতা কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী (বেবী) জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একবার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কখনও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। জনগণের পাশে ছিলাম এবং আগামীতেও থাকব ইনশাআল্লাহ। আমি যদি জয়ী হতে পারি, তাহলে সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটনশিল্প, আইসিটি খাতের উন্নয়নসহ একটি স্মার্ট, আধুনিক, মডেল উপজেলা হিসেবে কাপ্তাই উপজেলাকে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাব।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নাছির উদ্দিন (দোয়াত কলম) উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবসময় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় মানুষের পাশে থেকেছি। আশা করি জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি জয়ী হই, তাহলে কাপ্তাই উপজেলাকে একটি পর্যটনবান্ধব উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব। পাশাপাশি প্রত্যেক পাড়ায় সরকারের উন্নয়নকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব।’
ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিকাশ তঞ্চংগ্যা বলেন, ‘একবার আমি কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমি সে সময় উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ছুটে গিয়েছি, জনগণের উপকার করার চেষ্টা করেছি এবং সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হয়েছি। গত কয়েকবছর পদে না থাকলেও সবসময় আমি জনগণের পাশে থেকেছি। আমি জয়ী হলে কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের যে ধারা চলছে সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।’
ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ‘টিউবওয়েল’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। প্রচার প্রচারণায় যেখানে যাচ্ছি সেখানেই পাহাড়ি–বাঙালি সর্বস্তরের জনগণ আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। আমি যদি ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হই, তাহলে একটি পরিচ্ছন্ন, মাদকমুক্ত, স্মার্ট কাপ্তাই উপজেলা গঠনে উপজেলা পরিষদকে সহায়তা করে যাব।’
‘টিয়া পাখি’ প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সুইপ্রু মারমা বলেন, ‘আমি একবার কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেছি। সে সময় উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাই উন্নয়ন কর্মকান্ডকে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে আমি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি।’
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কাপ্তাই উপজেলা শাখার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা আহমেদ পপি (ফুটবল) বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে তরুণ-তরুণীদের নিয়ে কাজ করব, তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানসহ বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করব।’
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি হোসেনও (কলস) জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রচার প্রচারণায় যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, ‘৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাপ্তাই উপজেলায় ২৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হ হবে। মোট ৪৯ হাজার ৫২৮ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।’
- বিষয় :
- কাপ্তাই