ত্রাণ নয়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে মুক্তি চান গ্রামবাসী
দেওয়ানগঞ্জে ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা এলাকা পরিদর্শনে ইউএনওসহ জনপ্রতিনিধিরা। ছবি: সমকাল
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪ | ০৪:৫১
বর্ষাকালে পাল্টে যায় মরা ব্রহ্মপুত্রের চিত্র। কানায় কানায় ভরে যায় নদ। প্রবল ভাঙনের কবলে পড়ে দেওয়ানগঞ্জের পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া। ভাঙনে বিলীন হয় বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি। নিঃস্ব হয় মানুষ। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না সরকার।
যে কারণে পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী নিজেদের অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করছেন বাঁশের বাঁধ। এ খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাটি পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স।
সেখানে ছুটে আসেন ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার মানুষ। ভাঙন রোধের প্রশ্নে উপস্থিত গ্রামবাসী বলেন– ত্রাণ নয়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে মুক্তি চান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০ বছর আগে থেকে এই অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে পোল্যাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া ও ফারাজীপাড়া। বারবার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে হতাশ হয়েছেন গ্রামবাসী। যে কারণে বাঁচার তাগিদে নিজ অর্থায়নে বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আলতাব হোসেন। এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাতটি বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করবেন তারা। এ কাজে তাদের ব্যয় হবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত চারটি বাঁধ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তারা আশা করছেন, এতে সাময়িকভাবে ভাঙনের হাত থেকে বেঁচে যাবে পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া। এখানেই শেষ নয়, এ অঞ্চলকে স্থায়ীভাবে নদের ভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থায়ী নদী শাসন চান এলাকাবাসী।
গত মাসের শেষের দিকে পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে সাময়িক রক্ষা পেতে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ শুরু করেন। এ বিষয়ে গত ৭ মে ‘ভাঙন ঠেকাবে বাঁশের বাঁধ’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে এলে গত মঙ্গলবার এলাকাটি পরিদর্শনে যান ইউএনও। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাহাদুরাবাদ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আহাম্মদ আলী, আলতাব হোসেন, বর্তমান সদস্য হাশমত আলী প্রমুখ।
বাহাদুরাবাদ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, ‘আমরা পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী বরাবরই অবহেলিত। নেই ভালো রাস্তাঘাট। তার ওপর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করছি নদের ভাঙন থেকে সাময়িক রক্ষার জন্য। আমরা সরকারের কাছে নদের ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ চাই।’
সাবেক ইউপি সদস্য আহাম্মদ আলীর ভাষ্য, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী এ পর্যন্ত ছয় থেকে সাতবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। এক পাড় ভাঙে অন্য পাড় গড়ে। জেগে ওঠা চরেই বসতি গড়ে তোলেন তারা। এবারের ভাঙনে তাদের গ্রামের ৫০০-৬০০ পরিবারকে পথে দাঁড়াতে হবে।
বাহাদুরাবাদ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য হাশমত আলী জানান, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়াবাসী দরিদ্র। দিন আনে দিন খায়। তাদের পক্ষে বাঁশের বাঁধ নির্মাণের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করে নদের ভাঙন সাময়িক বন্ধ হবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীশাসন প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ‘এলাকাবাসীর উদ্যোগ প্রসংশনীয়। কিন্তু এ কাজে স্থায়ী সমাধান হবে না। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি শিগগির গ্রামবাসী নদের ভাঙনের স্থায়ী সমাধান পাবেন।’
- বিষয় :
- জামালপুর