হাটবাজার ঘিরে ভোটের উত্তাপ

প্রার্থী গোলাম হোসেনের সমর্থকদের লিফলেট বিতরণ ও প্রার্থী শেফালি আক্তারের নির্বাচনী প্রচার সমকাল
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪ | ০০:২২
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার চলছে মূলত হাটবাজারে। বিএনপিও ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে হাটবাজারেই ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছে।
প্রতিদিনই বেশির ভাগ প্রার্থী উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে আসা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। বৃহস্পতিবার সাটুরিয়ার হাট প্রার্থীদের আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে। হাটে আসা দোকানিদের কাছে ভোট চেয়ে হ্যান্ডবিল বিলি করেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
সাটুরিয়া হাটে আসা দরবেশ আলীর বয়স আশি ছুঁইছুঁই। তিনি জানান, আগে দেখেছেন ভোটে যারা দাঁড়ায় তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইত। এখন কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে বাড়ি যায় না। আগে রাতভর প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দিত। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিত। সেই ভোটের দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।
হাটে আসা শমশের আলীর ভাষ্য– আগের দিনে প্রার্থীরা সমাজের মাতবরদের কাছে ধরনা দিতেন। যে প্রার্থীর পক্ষে বেশি মাতবর বা সমাজপতি থাকতেন, সেই প্রার্থীই বিজয়ী হতেন। এখন আর সমাজপতিদের কাছে ভোট নাই। এখন সবাই নেতা। যাঁর যাঁর ভোট তাঁর তাঁর পকেটে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বালিয়াটি গ্রামের মনোজ কর্মকার বলেন, ‘আগের দিনে ভোটের রাতে ঘুমাতে পারি নাই। সারারাত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলে দলে ভোট চাইত, আর অন্য প্রার্থীর লোকেরা পাহারা দিত। মা-ঝিদের কাছে প্রার্থীরা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া চাইত। প্রার্থীদের সঙ্গে থাকত পান, বিড়ি ও চকলেট। পান পেয়ে চাচিরা খুব খুশি হতো। চকলেট শিশুদের দিলে মার্কা নিয়ে রাস্তায় মিছিল করত। সেই নির্বাচন এখন আর নাই।’
সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয় প্রার্থীর চারজনই আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বালিয়াটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রহুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমজাদ হোসেন লালমিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম হোসেন ও সহসভাপতি ওয়াদুদ বাবু। তারা মাঠে থাকলেও প্রতিপক্ষ প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাসদের নেতা শাজাহান আলী সাজু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা কৌশলে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। এতে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। অন্যদিকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র ও জাসদের প্রার্থী। ভোটারদের মুখে মুখে রয়েছে এই দুই প্রার্থীর নাম।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিশ মাখন বলেন, সরকারের উপজেলা ডামি নির্বাচন যেমন বিএনপি বর্জন করেছে, তেমনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়, সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি প্রার্থী ছিলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে পাতানো নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চারজন প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা কার পক্ষে ভোট চাইবেন– এ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই চার প্রার্থীকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলায় ৬০টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ২৯ মে।
- বিষয় :
- উপজেলা নির্বাচন