পরিত্যক্ত চার ছাত্রাবাস ঘিরে অপরাধ কর্মকাণ্ড

.
হাসান হিমালয়, খুলনা
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪ | ২৩:১২
ছায়াঘেরা শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। দাঁড়িয়ে আছে তালাবদ্ধ চারটি ছাত্রাবাস। গত ১৫ বছর তালাবদ্ধ থাকায় ভবনগুলো আর ব্যবহার উপযোগী নেই। এখানে দিনের প্রশান্তিময় পরিবেশ বদলে যায় রাতের আঁধারে। খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসগুলো হয়ে ওঠে মাদকসেবীসহ বিভিন্ন অপরাধীর আখড়া। ইতোমধ্যে ছাত্রাবাসগুলোর দরজা-জানালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। মাদকসেবীদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ আশপাশের বাসিন্দারা।
১৯৬৩ সালে খুলনা নগরীর খালিশপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। প্রায় ২৯ একর জমির ওপর স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে তিনটি একাডেমিক ভবন ও চারটি ছাত্রাবাস ছিল। বর্তমানে ৯ বিভাগে সাড়ে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করলেও ছাত্রাবাসগুলো পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা বা মেসে থেকে পড়ালেখা করতে হয়। ফলে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তারা।
ইনস্টিটিউট থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য মূল ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্রদের জন্য তিনটি এবং ছাত্রীদের একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। ছাত্রদের তিন হলে ৪৪১ এবং ছাত্রী হলে ৬০টিসহ মোট ৫০১টি সিট ছিল। প্রতিটি ভবন চার তলাবিশিষ্ট।
জানা যায়, রেফার্ড পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ২০০৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে ছাত্রাবাস আর খোলা হয়নি।
ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষক জানান, ছাত্রাবাসগুলোর ওপর শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতারাই হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। মাদক কারবার, বাইরে থেকে মানুষ ধরে এনে আটকে রেখে নির্যাতনসহ নানা অপরাধ চলত হলগুলোতে। এসব কারণে কেউই হলগুলো চালুর পক্ষে ছিলেন না। ছাত্ররা যাতে জোর করে হলে উঠতে না পারে সেজন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন জানানো হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন রাস্তার চাইতে ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর অনেক নিচু। এ কারণে সহজেই অপরাধীরা হলের ভেতরে যাতায়াত করতে পারে। সন্ধ্যার পর প্রতিরাতেই হলের ভেতরে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। পুলিশ অভিযান চালালে অপরাধ তৎপরতা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়, পরে পরিবেশ আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পরিত্যক্ত একটি ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে মাংসসহ বেশ কয়েকটি কুকুরের চামড়া উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন কিশোরকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে কুকুর এনে পরিত্যক্ত হলের ভেতরে জবাই করে মাংস বিক্রি করত তারা। এ ছাড়া প্রায়ই হলের মধ্যে মাদক বিক্রি নিয়ে মারামারি, মাদক সেবন করে চিৎকার, হই-হুল্লোড় করে বখাটেরা। হল-সংলগ্ন সড়কে ছিনতাইও হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী অনিমেষ পাল বলেন, বিশাল ক্যাম্পাস পাহারা দেওয়ার লোক কম। ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত কেউ যাতে না ঢুকতে পারে এজন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ ফুট উঁচু নতুন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধী দমনে প্রায়ই পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। গত ঈদে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হলের ভেতর থেকে ১৭ জনকে আটক করে। তিনি বলেন, হলের জায়গায় ১০ তলা একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। বাকি জায়গায় ৫০০ সিটের একটি ছাত্রী হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।