ক্ষেত পেরিয়ে যেতে হয় রোগীর, নেই বিদ্যুৎও

ভোলাহাটের আন্দিপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে ফসলের ক্ষেত, পাশে বাঁশঝাড় সমকাল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪ | ২৩:৫২
তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে জামবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্দিপুর গ্রামে আট শতক সরকারি খাসজমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই ক্লিনিকটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় পাড়ি দিতে হয় ফসলের ক্ষেত। জামবাড়িয়া শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। আর ভোলাহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ফলে ভোগান্তির শিকার হলেও প্রতিদিন পাঁচ গ্রামের ৭০-৮০ জন রোগী এ ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
আন্দিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক তিন বছরের বেশি সময় রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই চলছে। এতে তাপপ্রবাহের সময় রোগী ও তাদের স্বজনের তীব্র ভোগান্তি পোহাতে হয়। চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হচ্ছে। সেবা দিতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালামের ভাষ্য, প্রখর রোদে তীব্র গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা নিতে এসে গরমে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় ব্যক্তিমালিকানার জমি দিয়ে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
সরেজমিন ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় দেখা গেছে। গরম থেকে বাঁচতে অনেকের কাছে ছিল হাতপাখা। একই অবস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের এক হাতে পাখা, অন্য হাতে রোগীর সমস্যা শুনে খাতায় লিখছিলেন। ক্লিনিকে মা ও শিশুদের ভিড় ছিল বেশি। ক্লিনিকের বাইরে প্রায় ২০০ ফুট দূরে মূল সড়ক। মাঝের অংশটুকু ফসলের ক্ষেত। এসব জমির আইল দিয়ে সেবাপ্রার্থীদের ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। অথচ এটি স্থানীয় আদমপুর, আন্দিপুর, কৃষ্ণপুর, হেলাচী ও বড়গাছি উত্তরপাড়ার সাত থেকে আট হাজার মানুষের চিকিৎসায় ভরসার জায়গা।
এমনকি একটি গ্রামের সেবাপ্রার্থীদের যেতে হয় বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে। অসুস্থ ও বৃদ্ধ রোগীদের এভাবে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আন্দিপুর কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর
পর থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ও রাস্তা নেই। এতে অসুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং মা ও শিশুদের সমস্যা বেশি হয়। ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আলমগীরের ভাষ্য, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় হাঁসফাঁস গরমে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন দিনে ক্লিনিকে অন্ধকার নেমে এলে সেবায় বিঘ্ন ঘটে। রোগীদের আসা-যাওয়ায় কষ্ট বেড়ে যায়।
ক্লিনিকটির দিকে তাকিয়ে রোগী আমেনা বেগম বলছিলেন, এ ক্লিনিক ছাড়া এলাকায় আর কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। কিন্তু রাস্তা না থাকায় অসুস্থ রোগীকে রিকশা বা ভ্যানে করে আনা যায় না। গরমে শিশুরা কান্নাকাটি করে। চিকিৎসকসহ রোগীরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেন। আরেক সেবাপ্রার্থী আলেকনুর হাঁটতে পারেন না। তিনি পাশের সড়কে বসে ছিলেন। তাঁর স্বজন গেছেন চিকিৎসকের কাছে সমস্যা জানাতে। তিনি ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ নিয়ে আসবেন।
ক্লিনিকের জায়গাটি খাস হলেও এর চারপাশের জায়গা ব্যক্তিমালিকানাধীন বলে জানান একটি জমির মালিক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্লিনিকে যেতে অন্তত ২০০ ফুট রাস্তা দরকার। তাঁর অংশসহ পাশের রহিম ও তোফাজ্জলের জমির কিছু অংশ সংশ্লিষ্টরা কিনে রাস্তা তৈরি করলে আর ভোগান্তি থাকে না। এটি নির্মাণের সময় বিদ্যুৎ ও রাস্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখার প্রয়োজন ছিল। ক্লিনিকের সামনের জমির মালিক আবদুর রহিমের ভাষ্য, জমির ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করায় ফসলের ক্ষতি হয়। এর পরও তারা যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিকটির সভাপতি জামবাড়িয়া ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মতিউর রহমান। তিনি বলেন, একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্লিনিকের সংকটের কথা জানানো হয়েছে। তবে কোনো কাজ হয়নি। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুব আলমের ভাষ্য, বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশলীসহ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। রাস্তা করার চেষ্টা চলছে। অর্থ পেলে এর সমাধান হবে। দ্রুত সংকট কেটে যাবে বলে আশা তাঁর।
কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁকে অবগত করেছেন উল্লেখ করে ভোলাহাট জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম মেনে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- স্বাস্থ্যসেবা