এহন কুম্মে বীজধান পামু

বীজধান
জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ০১:৪২
আউশ আবাদের জন্য ৩৫ শতক জমিতে বীজতলা করেছিলেন মো. ইউনুছ মীরা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে পুরো জমি। ফলে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া গ্রামের কৃষক ইউনুছের। গতকাল সোমবার তিনি বলছিলেন, ‘এহনো দেড়-দুই আত পানি জইম্যা রইছে। মোর সব বীজতলা পইচ্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন টাহা আর বীজ পামু কই? আর কি দিয়া ধান লাগামু হেই চিন্তায় আছি।’
একই গ্রামের অনেছ খাঁ বলেন, ‘মোর ১০ কড়া জমির বীজ নষ্ট অইয়া গ্যাছে।’ হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের ফজলু প্যাদা বলেন, ‘মুই ৩০ শতাংশ জমিতে ৭৫ সের ধান হালাইছি। বইন্যার পানি জইম্যা হেইয়া সব পইচ্যা গ্যাছে। এহন কুম্মে বীজধান পামু?’ বীজধান পেলেও তা বীজ করে চাষ করতে বহু ভোগান্তি পোহাতে হবে তাঁর মতো উপজেলার প্রায় অর্ধেক কৃষকের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৭৫৫ হেক্টর জমিতে আউশের বীজতলা করেন চাষিরা। এবার ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৯৭৫ টন। সরকারি হিসাবে ৭৫৫ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ১৭৯ হেক্টর নষ্ট হয়েছে। তবে সরেজমিন জানা গেছে, নষ্ট হওয়া বীজতলার পরিমাণ সাড়ে তিনশ হেক্টরের মতো।
কৃষকরা জানান, রিমালের প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও পায়রা নদীতে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ধসে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায় আউশের বীজতলা। সপ্তাহখানেক ধরেই এসব বীজতলা তলিয়ে আছে ২ ফুট পানির নিচে। ভরা মৌসুমে এমন ক্ষতির মুখে পড়ায় চাষিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া, কালিপুরা, কৃষ্ণনগর, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী, গাজীপুর, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, আমতলী সদর ইউনিয়নের ছোট নীলগঞ্জ, চলাভাঙ্গা, চাওড়া ইউনিয়নের বেতমোর বৈঠাকাটা, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া ও বালিয়াতলী গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। পুরো এলাকায় বীজতলা পচে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ।
বৈঠাকাটা গ্রামের মাসুম গাজী, জসিম খান, আমতলী সদর ইউনিয়নের আলতাফ হাওলাদার, ঘোপখালী গ্রামের হোচেন বয়াতির ভাষ্য, বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে তারা আউশের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। জলোচ্ছ্বাসের কারণে এ মৌসুমে ধান চাষ করতে পারবেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে সামনের দিনে কী খাবেন, তাই এখন একমাত্র চিন্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছার ভাষ্য, ১৭৯ হেক্টর আউশের বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। ফলে এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে। ফলন বিপর্যয়েরও আশঙ্কা করছেন।
ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দেন।
- বিষয় :
- ধান সংগ্রহ