বস্তা থেকে মাথার খুলি টেনে আনল কুকুর

ফাইল ছবি
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ০২:১৪ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ | ১২:৫৮
ছোট্ট একটি মাথার খুলি নিয়ে টানাটানি করছিল দুটি কুকুর। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে আরেক টুকরো আনতে ধান ক্ষেতে যায় এক কুকুর। টেনে বের করে একটি বস্তা। সেখানে আরও কয়েক টুকরো মাংস ছিল। ইতোমধ্যে উটকো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। লোকজনের নাকে পৌঁছতেই উৎস খুঁজতে ঘটনাস্থলে চলে আসেন কয়েকজন। উদ্ধার করেন আরও ক’টি দেহাংশ। তাৎক্ষণিক খবর দেওয়া হয় পুলিশে। গতকাল সোমবার সকালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ঘটে লোমহর্ষক এ ঘটনা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, ভূঞাপুর থানার ওসি আহসান উল্লাহসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা। দুপুরের দিকে তারা বস্তা থেকে ছড়িয়ে যাওয়া আরও বেশ কয়েকটি টুকরো উদ্ধার করেন। লাশের নমুনা সংগ্রহ করেন পুলিশের ফরেনসিক দলের সদস্যরা। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন ধানক্ষেতটি থেকে ৪০-৫০ গজ দূরের একটি বাড়ির কর্তা সুমন মিয়া। তিনি বস্তার মধ্যে লাল জামার এক টুকরো দেখে সেগুলো তাঁর নিখোঁজ মেয়ে নওশীন ইসলাম শর্মিলার দেহাংশ বলে ধারণা করেন। তবে এত ছোট ছোট মাংসখণ্ড দেখে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই এটি আসলে কোন হতভাগার লাশ।
গত ২৬ মে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শর্মিলা। ১০ বছরের মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ত। সেদিন তাকে না পেয়ে আশপাশে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়। এমনকি ওই ধানক্ষেতেও একাধিকবার সন্ধান চালানো হয়েছে। জিডি করা হয় থানায়।
শর্মিলার চাচা কাইয়ুম মিয়া জানান, লাশটি ছোট ছোট টুকরো করা হয়েছে। হাড়গোড়ও ছিল খণ্ড খণ্ড। অর্ধগলিত দেহাংশগুলো দেখে চেনার কোনো উপায় নেই কার লাশ। এটি শর্মিলার লাশ কিনা, এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে তার পরনের লাল পাজামার অংশ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি শর্মিলার মরদেহ হতে পারে।
শিশুটির বাবা সুমন বলেন, ‘যেখানে বস্তাটি পাওয়া গেছে, সেখানেও বেশ কয়েকবার খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে। কোনো কিছু মেলেনি। লাশের টুকরোর সঙ্গে ছেঁড়া জামা দেখে মনে হচ্ছে সেটি শর্মিলার। কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে লাশ যারই হোক, দ্রুত যেন তা শনাক্ত করা হয়। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তারা যেন আর কারও বাবা-মায়ের বুক খালি করতে না পারে সে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক।’
ওসি আহসান উল্লাহ্ জানান, ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। মাথার খুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। প্রতিবেদন হাতে পেলে লাশটি কার তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সুপার কায়সার জানান, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই এর রহস্য উদ্ঘাটন হবে। এখনও লাশের সব টুকরো পাওয়া যায়নি। সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’