ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

যুবদলের বিরোধে গুলিবর্ষণ, ৫ দিনেও ধরা পড়েনি কেউ

যুবদলের বিরোধে গুলিবর্ষণ, ৫ দিনেও ধরা পড়েনি কেউ

যুবদল নেতাকর্মীদের ওপর ককটেল ও গুলিবর্ষণ করা হয়। ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪ | ১১:৩৯ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ | ১৩:২৮

কুমিল্লা নগরীতে যুবদলের দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জেরে এক পক্ষের গুলিবর্ষণের ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে হামলায় জড়িতরা এলাকাছাড়া। ভারতে পালিয়ে যেতে পারে তারা।

গত ২ জুন রাতে নগরীর লাকসাম রোডের রামঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সিনিয়র নেতারা বলছেন, ‘দলের দুঃসময়ে এমন অস্ত্রবাজির ঘটনা দলকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।’ এরই মধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে অস্ত্রবাজির দুটি ভিডিও।

দলীয় সূত্র বলছে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু ও সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুর অনুসারী যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। গত রমজানে টিপুর অনুসারী দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলা চালান আবুর অনুসারী মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবদল তদন্ত করে রিয়াজকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। গত ২ জুন রিয়াজের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবু বলেন, ‘রিয়াজের অব্যাহতি প্রত্যাহারের পর তাঁর সমর্থকরা আনন্দ মিছিল করে। রাতে তখন অধিকাংশ নেতাকর্মী বাসায় চলে যায়, কয়েকজন চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ বিনা উস্কানিতে শটগান, ককটেল, হকিস্টিক নিয়ে হামলা করে শিবলু ও তাঁর লোকজন।’ তিনি বলেন, ‘এটা সন্ত্রাসী হামলা, কিন্তু মিডিয়ায় ‘দুই পক্ষের হামলা’ বলে ভুল খবর এসেছে। গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা তুহিনের শুক্রবার ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান।’

ভাইরাল হওয়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ফরিদ উদ্দিন শিবলুর নেতৃত্বে একদল যুবদল কর্মী আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ হামলা চালায়। এ সময় ১০ থেকে ১২টি গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। এ সময় মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছোটনের হাতে ছিল শটগান। মুখে মাস্ক লাগিয়ে হামলা করছেন কয়েকজন। নয়নের হাতে ককটেল, আজাদ অস্ত্র হাতে, বাবু নামে একজনকে ককটেল হাতে দেখা গেছে। 

অপর ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা গেঞ্জি পরা সাইফুল ইসলাম রনি ও ফুলহাতা শার্ট পরা আজাদ এক সঙ্গে হামলায় অংশ নিচ্ছেন। হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলাম তুহিন। এ ছাড়া ঠাকুরপাড়া এলাকার অন্তর দেবনাথ, নগরের দ্বিতীয় কান্দিরপাড় এলাকার জাকির হোসেন ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য স্বপন দাস আহত হন।

ঘটনার পরদিন কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবুর অনুসারী কবির হোসেন। এজাহারে বলা হয়, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব শিবলুর নেতৃত্বে এই হামলা হয়। অন্য আসামিরা হলেন– মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছোটন (৪০), দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ওরফে ভাগিনা রনি (৪২), যুবদল কর্মী রেজোয়ান (৩৭), নয়ন (৩৫), সাগর (৩৫) আজাদ (৩৬), মুরাদ (৩২)। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় ১৫-১৬ জনকে। তারা সবাই মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুর অনুসারী।

দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, ‘আমি হামলায় জড়িত ছিলাম না, আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’ 

মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘মিছিল শেষে আমরা বসে ছিলাম। হঠাৎ করে শিবলুর নেতৃত্বে তার লোকজন হামলা চালায়।’

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, ‘ফরিদ উদ্দিনকে গত রোজায় জখম করে রিয়াজ গ্রুপ। এ ঘটনায় রিয়াজকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, ঘটনার দিন অব্যাহতি প্রত্যাহারের পর ওরা আনন্দ-উল্লাস করে। পরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের ভাষ্য, যুবদলের দুটি গ্রুপে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। দলীয় সভায় বসে উভয় পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দেওয়া হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের কেউ নগরীতে নেই। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, আসামিরা ভারতে পালিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

×