ঢাকা শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নৌকাঘাটে চাঁদাবাজি বাড়তি ভাড়া আদায়

নৌকাঘাটে চাঁদাবাজি বাড়তি ভাড়া আদায়

নেত্রকোনার মদন উপজেলার বর্ণি নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার সমকাল

 মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪ | ০০:৪৩

মদনে বর্ণি নদীর সড়কের এক পাশে পানি উঠে যাওয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকাঘাটের নামে চলছে চাঁদাবাজি। ফতেপুর ইউপি সদস্য বকুল মিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ না করলে দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি। মদন-তাড়াইল সড়ক-সংলগ্ন বর্ণি নদীর পাড়ে এমন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, মদন-তাড়াইল সড়কের বর্ণি নদীতে সেতু নির্মাণ হওয়ায় নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়। তবে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একমাত্র সড়কটিতে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে নদীটি পারাপারের জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা বেছে নিতে হয় যাত্রীদের। তবে এই সুযোগে জেগে বসে একটি অসাধু চক্র। নিজেদের ট্রলারঘাটের জমির মালিক দাবি করে ২৫-৩০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রত্যেকটি থেকে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করছে চক্রটি। টাকা না দিয়ে প্রতিবাদ করলে শুনতে হয় গালাগাল। দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য বকুল মিয়া, প্রভাবশালী হিরণ মুন্সি, দুলাল ও বাবলু।
চাঁদাবাজির বিষয় জানতে পেরে গত শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি। নৌকা থেকে চাঁদা আদায় ও হুমকি-ধমকির সত্যতা পেয়ে ইউএনওসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি। বার্তাটিতে শোনা যায়, মেম্বার বকুলসহ আরও কয়েকজন ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদা দেওয়ার কারণে যাত্রীদের থেকে ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন নৌকার মালিকরা। বিষয়টি জানার পর গতকাল রোববার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন নৌকার মালিকরা। কারণ জানতে চাইলে নৌকার মালিকেরা বলেন, তাদের থেকে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা করে আদায় করছেন একটি চক্র।
নৌকার মালিক কবির, ভিক্ষুক মিয়া, সাদ্দাম মিয়া, আকুল মিয়া জানান, ইউপি সদস্য বকুল, দুলাল, হিরণ মুন্সি, বাবলু এই চারজনের নেতৃত্বে ঘাট থেকে প্রতিদিন চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হয়রানি হতে হয়। টাকা না দিলে কোনো নৌকা ঘাটে ভিড়তে দেবে না।

ইউপি সদস্য বকুল মিয়া বলেন, ‘তাদের থেকে কোনো টাকা নিচ্ছি না; বরং তারা যাত্রীপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। আমি চাই এই ঘাট উন্মুক্ত থাক। যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হোক।’ আরেক চাঁদা আদায়কারী দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমার জমিতে নৌকা ভিড়ালে আমাকে টাকা দিতে হবে।’
ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্ণি নদীর ঘাটে যান তিনি। নৌকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন চাদাঁবাজির সঙ্গে ইউপি সদস্য বকুলসহ কয়েকজন জড়িত। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে। ইউপি সদস্য হোন আর যেই হোন এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে একদল ট্রলার ঘাট থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে সংবাদ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।’

আরও পড়ুন

×