‘সাইকেল চাই না, বাবার মুখ শেষবার দেখতে চাই’

সৌদি আরবে নিহত মিলনের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সমকাল
মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪ | ২০:১৫
‘মাদ্রাসায় যেতে বাবার কাছে সাইকেল চেয়েছিলাম, কিনেও দিতে চেয়েছিলেন। সৌদি আরবে বাবা হঠাৎ মারা গেছেন। আমার সাইকেল লাগবে না। আমি শুধু বাবার মুখখানা শেষবারের মতো দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দিন।’ আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিল মাদারীপুরের পশ্চিম খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের নিহত সৌদি আরব প্রবাসী মিলন মাতুব্বরের (৩৫) ছেলে আবির মাতুব্বর (৯)।
নিহত প্রবাসীর স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে পাঁচ বছর আগে সৌদি আরবে যান পশ্চিম খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন। দেশটির রাজধানী রিয়াদের হালুজারায় কাজ করতেন তিনি। সেখানে বৈধ কাগজসহ (আকামা) নিজের খরচ চালিয়ে সংসারের জন্য টাকা পাঠাতেন। গত ১৮ জুন রাতে সৌদি আরবে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। সঙ্গে থাকা বাংলাদেশিরা মিলনকে রিয়াদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ খবর শোনার পর থেকে তাঁর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনের আহাজারি আর কান্না থামছে না। বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির বলছিল, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। এখন আমরা কীভাবে বাঁচব। পড়াশোনার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নেই।’
পরিবারের প্রায় ২০ লাখ টাকা ধারদেনা আছে জানিয়ে নিহত মিলনের স্ত্রী বলেন, সৌদি আরব থেকে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য তাদের নেই। সরকারের কাছে দাবি, তাঁর স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়। শেষবারের মতো ছেলের লাশটি দেখতে আকুতি জানান মিলনের মা-বাবাও।
নিহত মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন বলেন, মিলনের কয়েক লাখ টাকার ধারদেনা রয়েছে। তবে তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। সরকার যেন তাঁর লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে। অন্তত দেশের মাটিতে তাঁকে দাফন করার ব্যবস্থা হোক। ছেলেরাও যেন শেষ দেখা দেখতে পারে। কেরামত আলীর ভাষ্য, পরিবারটির হাল ধরার কেউ রইল না। সরকার অসহায় পরিবারটিকে যেন সাহায্য করে।
আবেদন করলে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান। তিনি বলেন, তারা চাইলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।