এক সপ্তাহে একই ট্রেন তিনবার লাইনচ্যুত
স্টেশনের লুপ লাইনে স্লিপার নষ্ট, নেই পাথর ও ক্লিপ
বগুড়ার সুখানপুকুর রেলস্টেশনে মঙ্গলবার লাইনচ্যুত ট্রেন (ডানে)। দুর্ঘটনার পর রেললাইন পরিষ্কার করছেন কর্মীরা সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪ | ০১:২৮ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ | ০৫:৩৪
বগুড়ায় এক সপ্তাহের মধ্যে একটি ট্রেন একই পথে তিনবার লাইনচ্যুত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ‘কলেজ ট্রেন’খ্যাত লোকাল ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। একই ট্রেন বারবার দুর্ঘটনায় পড়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কমে গেছে যাত্রীও। দুর্ঘটনা তদন্তে পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়ার সান্তাহার থেকে বোনারপাড়াগামী ৪৯২ মেইল ট্রেন এই এলাকায় ‘কলেজ ট্রেন’ হিসেবে পরিচিত। ট্রেনে এক সময় সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করতেন। ট্রেনটি এখনও প্রতিদিন সকাল ৭টায় বোনারপাড়া থেকে ছেড়ে দুপুর ১২টায় পৌঁছে সান্তাহার।
গতকাল সকাল ৮টায় সুখানপুকুর স্টেশনের লুপ লাইনে (মূল লাইনের পাশের লাইন) ট্রেনটির দুই বগি লাইনচ্যুত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ল। দুর্ঘটনায় কার দায়, তা খতিয়ে দেখতে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বারবার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে গাবতলী ও সুখানপুকুর রেলস্টেশনে সরেজমিন দেখা যায়, ১ নম্বর লুপ লাইনে কোনো পাথর নেই। স্লিপারের সংখ্যাও অপ্রতুল। লাইনের প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে কাঠের স্লিপারগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে ক্লিপ আটকানো নেই। প্রয়োজনীয় পাথর ও স্লিপার না থাকায় লাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেবে গেছে। একই দৃশ্য চোখে পড়ে বগুড়া, গাবতলী ও সুখানপুকুর স্টেশনসহ জেলার সব স্টেশনেই।
এর আগে ৩০ জুন গাবতলী স্টেশনে রাত পৌনে ৯টায় ট্রেনটির তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। রাতের বেলায় তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে অন্তত ৫ যাত্রী আহত হন। বগি তিনটি লাইনে তুলতে প্রায় ১৬ ঘণ্টা লেগে যায়। এই সময়ে ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল।
গত ২৫ জুন সুখানপুকুর রেলস্টেশনের প্রবেশমুখে ট্রেনটির দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৩ ঘণ্টা পর বগি দুটি উদ্ধার করলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনায় বেঁকে যায় ট্রেন লাইন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেললাইন নির্মাণে অসাধু চক্র ঠিকাদারি পায়। তারা নামকাওয়াস্তে কাজ করায় অল্প সময়ের মধ্যে রেলপথ বেহাল হয়ে পড়ে। ট্রেন চলে ঝুঁকি নিয়ে। লুপ লাইন মেরামতে ২০১৮ সালে এক চিঠিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন রেলের লালমনিরহাটের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। কিন্তু সেই চিঠির কোনো জবাব আজও মেলেনি।
তদন্ত কমিটির সদস্য বগুড়া রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, আমরা তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি। ইঞ্জিন ও লাইনে ত্রুটি এবং চালকের গাফিলতি আছে কিনা– খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রেনটির চালক অলিক কুমার ও মাসুদুর রহমান এবং গার্ড বা পরিচালক হিসেবে আছেন উজ্জ্বল কুমার ও সুলতান সালেক। তাদের দাবি, রেললাইনে পাথর না থাকায় দেবে গিয়ে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। তদন্ত কমিটির প্রধান রেলের লালমনিরহাটের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম মানিক বলেন, তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না।
- বিষয় :
- ট্রেন
- ট্রেন লাইনচ্যুত
- ট্রেন দুর্ঘটনা