ছয় বছরে ফেঞ্চুগঞ্জে ১২ ট্রেন দুর্ঘটনা, আতঙ্কে যাত্রীরা
আখাউড়া রেল সেকশনের ফেঞ্চুগঞ্জের কায়স্থ গ্রামে পাথরবিহীন রেলপথ সমকাল
মামুনুর রশীদ, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ০০:১১
সিলেট-আখাউড়া রেলপথে উদ্বেগজনক হারে ট্রেন দুর্ঘটনা বেড়েছে। রেলপথের এমন নিরাপত্তাহীনতায় সৃষ্টি হয়েছে চরম উদ্বেগ। গত ৬ বছরে ১২ বার ট্রেন দুর্ঘটনা এই রেলপথে; যা ট্রেনযাত্রীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তার মধ্যে এই রুটে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে।
১৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময় কাজ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় চলাচলকারী রেললাইনে পর্যাপ্ত নাট-বোল্ট, ফিসপ্লেট ও ক্লিপ থাকে না। রেললাইনে থাকে না অতি জরুরি পাথর। যেখানে সেখানে লেভেল ক্রসিংয়ের অধিকাংশ ক্লিপ চুরি হয়ে যায়। এমন নানা কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ ছাড়া পুরোনো ইঞ্জিন ও কোচের কারণে শিডিউল বিপর্যয় ঘটে; যা পরবর্তী সময়ে লাইন সিগন্যালের বিচ্যুতির কারণে দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলের যাত্রীসেবার মান দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে যাত্রাপথে ঝুঁকি বাড়ায় রেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৪টার দিকে সিলেটগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রীমঙ্গলের কাছাকাছি আসার পর বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এবং বন্ধ হয়ে যায়। অনেক যাত্রী এ সময় ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশনের কাছে চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রীবাহী লোকাল ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জের মল্লিকপুরের কাছে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হলে ৪ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
ওই বছরের ১৬ আগস্ট রাতে মাইজগাঁও রেলস্টেশনে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ১৫-২০ যাত্রী আহত হন। ১৯ জুলাই সকালে ঢাকাগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটির একটি কোচ কুলাউড়া রেলস্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হলে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে বেশকিছু যাত্রী আহত হন। পরদিন ২০ জুলাই ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেস একই স্থানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
৭ জুলাই কুলাউড়ার হাজীপুরের পালকি ও মনু সেতুর মাঝখানে ট্রেনের লোকো ইঞ্জিনের হুসপাইপ ভেঙে ট্রেন থেমে যায়। ২৮ জুন অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস বরমচালের বড়ছড়ার ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে আটকে যায়। ২৩ জুন কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ঘটনায় ৪ জন যাত্রী নিহত ও অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন। ২ জুন হবিগঞ্জের বাহুবলের রশিদপুর স্টেশনে কুশিয়ারা ট্রেন লাইনচ্যুত হলে বেশ কয়েক ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। ২০২০ সালে কভিড-১৯ এর সময় প্রায় ২০ মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর ফের চালু হয় এই রুটে রেল চলাচল।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ জুন (বুধবার) রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর রেল দুর্ঘটনায় সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ প্রায় ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় ওই ট্রেনে থাকা ৯ শতাধিক যাত্রী। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি মাইজগাঁও রেলস্টেশনে সর্বশেষ যাত্রা বিরতি শেষে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর মাঝপাড়ার কাছে রত্না নদীর ওপর সেতুতে পৌঁছালে ট্রেনটির পেছনের দিকের ৫ থেকে ৬টি কোচ ট্রেনের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিষয়টি ওই লোকো মাস্টারের নজরে এলে তিনি তৎক্ষণাৎ হার্ড ব্রেক কষে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এ সময় পেছন থেকে আসা কোচের অংশ ট্রেনের মূল অংশে সজোরে ধাক্কা দিলে ট্রেনের ৩টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে যায়। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ট্রেনের ৯ শতাধিক যাত্রী।
ওই ট্রেনে থাকা শিমু বেগম নামে এক যাত্রী জানান, এত জোরে ব্রেক কষা হয়েছে যে, সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম জানান, আখাউড়া-সিলেট রেলরুটে ডাবল লাইনের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে আখাউড়া-সিলেট সেকশনের রেললাইনে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
- বিষয় :
- ট্রেন দুর্ঘটনা