কাজের আগেই মেয়াদ শেষ প্রকল্পের, তুলে নিয়েছে বিল

প্রকল্পের টাকায় মেলান্দহের বাগবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর, গেট নির্মাণ ও মাঠে মাটি ভরাটের কথা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি সমকাল
আনোয়ার হোসেন মিন্টু, জামালপুর
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪ | ০০:৪৬
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। নীতিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে শ্রমিকদের হাজিরা মাস্টাররোল জমা দিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে বিল উত্তোলনের কথা। তবে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। অথচ দুই প্রকল্প থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বিলের ৫০ শতাংশ টাকা। অবশিষ্ট টাকাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে। অথচ এসব বরাদ্দের খবর জানেন না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) বিশেষ কর্মসূচির আওতায় উপজেলার বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাচীর, গেট নির্মাণ ও মাটি ভরাট বাবদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাদে পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংযোগ সড়ক, সীমানা প্রাচীর এবং বাদে পলাশতলা আকন্দবাড়ী গোরস্তানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
প্রকল্প দুটির বাস্তবায়ন ও অর্থ উত্তোলনের সময়সীমা ছিল গত ৩০ জুন। প্রকল্প দুটির বাস্তবায়ন কমিটির কোনো সভা ছাড়াই সভাপতি হন স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন। গত বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, কোনো প্রকল্পের কাজের চিহ্ন নেই। এসব বরাদ্দের খবর জানেন না স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। বাদে পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, রাসেল মিয়া ও রক্তিম ইসলামের ভাষ্য, রাস্তা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্যের বাড়ির ভেতর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে রাস্তা ডুবে থাকায় পাঠদান বন্ধ থাকে। এখন বরাদ্দের খবর শুনে অবাক তারা।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকল্পের শুরুতেই বরাদ্দের টাকার পরিমাণ ও কাজের বর্ণনাসহ নির্ধারিত সাইজের সাইনবোর্ড টানাতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হলে প্রকল্প বাতিল করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত নেওয়াসহ দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে প্রকল্পটির কাজে এসব নিয়মকানুন কাগজেই সীমাবদ্ধ।
স্কুলের নামে বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার নাজমা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদও বরাদ্দের বিষয়টি জানেন না। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিই প্রকল্প কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা।
বাগবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলায়মান হোসেন বরাদ্দের বিষয়টি লোকমুখে একদিন আগে শুনেছেন। এসব বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন ভালো বলতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবুল হোসেন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে বিশেষ বরাদ্দ আনেন।
বরাদ্দ থেকে একটি বিল উত্তোলন করা হয়েছে স্বীকার করে আবুল হোসেন বলেন, তিনি দুই প্রকল্পেরই কাজ করবেন। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আ. রাজ্জাকের ভাষ্য, প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে একাংশের বিল দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা স্থানান্তর করে মাদার অ্যাকাউন্টে রাখা আছে। কাজ করলে বিল দেওয়া হবে।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বরাদ্দের টাকা এনে লুটপাট হয় অভিযোগ করে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, তাদের সঙ্গে যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তা না হলে এ খাতের দুর্নীতি কোনো দিন বন্ধ হবে না।
জুনের শেষে বরাদ্দ আসায় টাকা ছাড় করে মাদার অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে বলে জানান ইউএনও মাহবুবা হক। প্রকল্পের টাকায় কাজ না করে এবং সময়সীমা শেষে ফেরত না পাঠিয়ে স্থানান্তর করা নীতিমালা পরিপন্থি কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়ে জেলার এমপি ও মন্ত্রীদের প্রসঙ্গে টানেন তিনি।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান বলেন, কাবিটার বিশেষ কর্মসূচির ওপর নেওয়া প্রকল্প নিয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
- বিষয় :
- প্রকল্প