ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ভিসি সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগে স্বস্তি ক্যাম্পাসে

ভিসি সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগে স্বস্তি ক্যাম্পাসে

অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। ছবি: সংগৃহীত

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪ | ০৭:৪৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারতেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাঁর দুর্নীতি নিয়ে দু’কলম লিখতে পারতেন না ক্যাম্পাসের সাংবাদিকরাও। ইউজিসিসহ ওপর মহলে তাঁর হাত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রে তিনি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপাচার্য (ভিসি) সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগের দাবিতে গত ৭ আগস্ট থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে গত মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। নানা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারারকে। পদত্যাগের দাবির সপ্তম দিনে বুধবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বরাবর পদত্যাগপত্র দেন সৌমিত্র শেখর।

জানা গেছে, সৌমিত্র শেখর কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে এক বছরেরও বেশি সময় একাই ৮ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে এ নিয়ে সমকালে ‘উপাচার্যের দখলে ৮ পদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চাপের মুখে ছাড়েন তিনটি পদ। বাকি পাঁচটি পদ পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আগলে রাখেন তিনি। বিতর্কিত ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তিনটি অনুষদে ডিনের দায়িত্ব প্রদান, তাঁর আস্থাভাজন প্রক্টর উজ্জ্বল কুমারকে রাখেন ডিনসহ তিন পদে, বিধিবহির্ভূতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক নিয়োগ দেন ফিন্যান্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তারিকুল ইসলামকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জনের বেশি সহকারী অধ্যাপক থাকতেও আইনবহির্ভূতভাবে একজন প্রভাষককে দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রক্টর পদে নিয়োগ। নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ না করে নিয়োগ দিতেন ‘বিভাগীয় প্রধান’। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া দুটি গাড়ির মধ্যে একটি উপাচার্য নিজে ও অপরটি ঢাকায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চালককেও নিয়মিত থাকতে হতো ঢাকায়।

বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভেঙে জাল সনদে সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তিকে হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। একই পদে চাকরিপ্রার্থী কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাহানারা মুক্তার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগটি ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এ বিষয় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে চিঠি দেয় ইউজিসি। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সৌমিত্র শেখরের প্রাইভেটকার চালক জাকিরের একটি অডিও রেকর্ড রয়েছে সমকালের হাতে।
ড. সৌমিত্র শেখর আইন ভেঙে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। তাঁর ব্যক্তিগত সহচরদের লাগিয়ে রাখতেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেছনে। তাঁর নানা অপকর্ম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেননি কেউ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নিয়োগ বাণিজ্য, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়েছিলেন উপাচার্য সৌমিত্র শেখর। তাঁর পদত্যাগে স্বস্তি ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ড. সৌমিত্র শেখরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়; কিন্তু তারও কোনো জবাব দেননি তিনি।

আরও পড়ুন

×