কুমিল্লায় ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা

খাবারের আশায় দেখে ছুটে আসা নারী পুরুষ। ছবি: সমকাল
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪ | ২১:২৮ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪ | ০৫:৩৪
কুমিল্লার শহরের পাশে গোমতী নদীর বাটপাড়া এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এসএসসি ২০০১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নিয়ে আসা হয় খাদ্য সামগ্রীর একটি মিনি কাভার্ডভ্যান। এ সময় প্যাকেট খাবারের আশায় দেখে ছুটে আসেন অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ। কিন্তু পানি দেখতে আসা বহিরাগত লোকজনের ভীড়ে অনেক বন্যা দুর্গত নারী পুরুষই প্যাকেট না পেয়ে ফিরে যান।
সেখানে বাঁধে আশ্রয় নেয়া গোমতী চরের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, বুধবারও চেষ্টা করেছি বাড়িতে থাকতে, মনে করেছিলাম পানি কমে আসবে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর থেকে আর বাড়িতে থাকার উপায় না পেয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাঁধে চলে এসেছি। এখনো সরকারিভাবে কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি।
পাশের পালপাড়া রেলগেইট এলাকার পশ্চিম পাশের আড়াইওড়া এলাকায়ও ছিল একই চিত্র। সেখানে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসেন একটি বেসরকারি সংস্থা রোটারেক্টের লোকজন। তারা বুধবারের করা তালিকা অনুসারে প্যাকেট বিতরণ করায় অনেকেই খাদ্য সামগ্রী পাননি।
সেখানকার মিন্টু দাস ও রেজিয়া বেগম বলেন, গত দুই দিনে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা তারা পাননি। বাঁধে সেখানকার অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে পলিথিনে নিচে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গোমতী নদীর ডান পাশে ৬৫ এবং বাম পাশে ৭৬.৩ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ আছে। গোমতী নদীর সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও তিতাস এলাকার গোমতী চরে বাসিন্দারা গোমতী বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।
উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল বলে দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন। জেলার বন্যায় আক্রান্ত ১২টি উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১২ লাখ টাকা এবং চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৪০ টন।
জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার থেকে আশ্রয় নিয়েছেন শিশুসহ ৩৫ জন লোক। সেখানে আশ্রয় নেয়া অন্তঃসত্ত্বা লাকী আক্তার বলেন, দুটি বাচ্চা নিয়ে কষ্টে আছি। কেউ খবর নিতেও আসেনি। আবদুল আলিম ও হনুফা আক্তার বলেন, গত দুই দিনে সরকারিভাবে কেউ কোন খাবার দিতে আসেনি। নিজ উদ্যোগে তারা শুকনো খাবার খেয়ে যাচ্ছেন।
একই চিত্র ছিল জাফরগঞ্জ মীর আবদুল গফুর ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ২০ জন। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, দুই দিন ধরে নিজেদের কেনা শুকনো খাবার খেয়ে যাচ্ছি। বাচ্চাদের খাবার নিয়ে সমস্যায় আছি। সরকারি সহায়তা আসেনি।
পাশের গংগামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউশানে আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু। সেখানে সরকারি সহায়তা না পৌছলেও দুপুরে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী শুকনো খাবার বিতরণ করেন। অপর দিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন গোমতী বাঁধের সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
রাতে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা সমকালকে বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র গুলিতে বিকাল থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয় এবং তা অব্যাহত থাকবে। এদিকে জেলার অন্যান্য উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্র গুলিতেও সরকারীভাবে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
রাতে জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, বন্যা দুর্গতদের খাদ্য সহায়তায় ৩৪০ টন চাল এবং প্রতি উপজেলায় ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।
এর আগে গত দুই দিনে অতি বৃষ্টি ও ভারতের পানিতে গোমতীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে গোমতীতে পানি ১১৩ বিপদসীমার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
- বিষয় :
- কুমিল্লা
- বন্যা
- ত্রাণ বিতরণ