রাবির সেমিনারে বক্তারা
শিক্ষক-সাংবাদিক স্বেচ্ছায় দড়ি পরায় টিকেছে স্বৈরাচার

শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে ‘আগামীর বাংলাদেশ : তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিক মানজুর আল মতিন। ছবি: সমকাল
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪ | ২২:১৪
স্বৈরশাসন একা একা টেকে না। তাকে রাখতে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। শেখ হাসিনার সরকারকে স্বৈরাচার হতে সবচেয়ে ভূমিকা রেখেছেন শিক্ষক ও সাংবাদিক। তারা স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি পরে পশুর মতো আচরণ করেছেন।
শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে ‘আগামীর বাংলাদেশ : তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিক মানজুর আল মতিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হবে গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্র। দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কিনা, এমন প্রশ্ন উঠছে। আসলে প্রশ্নটা হওয়া উচিত, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও কিন্তু এক ধরনের রাজনীতি। এটি দলীয় লেজুড়বৃত্তিক নয়। রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আসলে এটি হবে দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমরা লড়াই জারি রাখব। কিন্তু দ্বিমতও করব। কেউ যেন ভেবে না বসে, বাংলাদেশে নতুন করে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এত সহজে আমরা বিভাজিত হবো না। এই যে সংহত শক্তি, তাদের একজনকেও ব্যর্থ হতে দিলে আমরা সবাই মিলে ব্যর্থ হবো। তাই সবার দ্বিমত সঙ্গে নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, স্বৈরশাসন একা একা টেকে না। তাকে টেকানোর জন্য অনেক কম্পোনেন্ট প্রয়োজন। সেখানে কেউ ইচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায় ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনার আমলে ইচ্ছায় যে দুই শ্রেণি খুব বেশি ভূমিকা পালন করেছে, তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাদের বুদ্ধিজীবী বলা হয়। অন্যটি সাংবাদিক।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য বলতে পারেন, তিনি হুকুমের চাকর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তো কারও হুকুমের চাকর নন। অথচ আমরা কি দেখেছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় অংশ স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি বাঁধা পশুর মতো আচরণ করেছেন। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না– একটা দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সাংবাদিকের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু তারাও শিক্ষকদের মতো স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি পরে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান সাদমান সাব্বিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রমুখ।