ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চিকিৎসকদের উপস্থিতি নগণ্য চরম ভোগান্তি রোগীদের

চমেক হাসপাতাল

চিকিৎসকদের উপস্থিতি নগণ্য চরম ভোগান্তি রোগীদের

ফাইল ছবি

 শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম 

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:০২

প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পৌঁছালেও চিকিৎসা পেতে পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা লাকি আক্তারকে।
লাকির মতোই অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাসেবা পেতে গতকাল চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আরও অনেক রোগী ও স্বজনদের। এর কারণ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি। গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। অনেক ডাক্তার ওয়ার্ডে উপস্থিত থাকলেও কম রোগী দেখেছেন।
সোমবার সকালে দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেন লাকির বাবা ষাটোর্ধ্ব মো. ইসহাক। প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে দেখালে সেখানকার চিকিৎসক তাদের দ্রুত চমেক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। তার পর বেশ ঝক্কি-ঝামেলা শেষে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছলেও তাৎক্ষণিক চিকিৎসক দেখিয়ে বাবাকে ভর্তি করাতে বেগ পেতে হয় লাকিকে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে লাকি বলেন, ‘জরুরি বিভাগে বাবাকে নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও ডাক্তার দেখাতে বেগ পেতে হয়েছে। কারণ এখানে রোগীর উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু ডাক্তার আছেন মাত্র একজন। অনেক কষ্টে, বাধা পেরিয়ে বাবাকে জরুরি বিভাগে দেখানোর পর হৃদরোগ বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেন ডাক্তার। সেখানে বাবাকে নিয়ে যেতে একটি ট্রলিও পাইনি। ধরাধরি করে বাবাকে হৃদরোগ বিভাগে নিয়ে গিয়ে দেখি রোগীর ভিড়। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, আজ নাকি ডাক্তারদের বেশির ভাগই অনুপস্থিত। এতক্ষণে বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। এতে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। অনেকক্ষণ পর বাবাকে ভর্তি করাতে পারি।’
চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে বড় ধাক্কা পড়ে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে। দ্রুত চিকিৎসাসেবা পাননি রোগীরা। বহির্বিভাগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ডাক্তার দেখাতে না পারায় অনেকেই জরুরি বিভাগেও ছুটে যান। তবে সেখানেও চিকিৎসক দেখাতে বেগ পেতে হয় তাদের। অনেকে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও যেতে বাধ্য হন। সরেজমিন চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ক্যাজুয়ালটি, হৃদরোগ, মেডিসিনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘিরে দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে।
২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি। প্রতিদিন সকাল থেকে ২ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন বহির্বিভাগে। সরকারি বৃহৎ এই হাসপাতালটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের অসচ্ছল রোগীদের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলার ১৫ উপজেলার পাশাপাশি ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ তিন পাবর্ত্য জেলা, কক্সবাজারসহ কয়েকটি এলাকা থেকে কম আয়ের মানুষদের একটি বড় অংশ চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন এখানে।
চলমান সমস্যা সমাধানে গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। দাবি 
মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পুরোদমে কাজে ফিরতে রাজি হননি চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালন করতে বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশনা দেন পরিচালক।
মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগে কথা হয় মাকে ডাক্তার দেখাতে আসা নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা মো. জুলফিকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বমি, জ্বর, পেটব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে ভুগছেন মা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। 
হাসপাতালের পরিচালক তসলিম উদ্দীন সমকালকে বলেন, ‘সমস্যা সমাধান করতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা কর্মস্থলে যোগ দেননি।’
আন্দোলনরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমাদের ঢাকার সিনিয়র ভাইরা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেভাবেই আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত পুরোদমে কাজে যোগ দেবেন না চিকিৎসকরা। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×