রাত নামলেই পদ্মায় বালু লুটের উৎসব
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থেমে নেই। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতে নামানো হয় ড্রেজার মেশিন। ফরিদপুরের ডিক্রিরচর এলাকায় সমকাল
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:০৭
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। দীর্ঘদিন এ এলাকায় রীতিমতো বালু লুটের উৎসব করে এসেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও হেরফের হয়নি সে অবস্থার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসনে স্থবিরতার সুযোগে এখন রাত নামলেই পদ্মায় নামানো হচ্ছে অবৈধ ড্রেজার। অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। এতে নদীভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও থামছে না আওয়ামী লীগ নেতাদের সিন্ডিকেট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হওয়া নদীভাঙনে সহায়-সম্পদ হারাচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে নদী ভেঙে কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে চলে এসেছে। অন্তত তিনটি গ্রাম নদীতে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। আরও অন্তত ১০টি গ্রামের অনেকাংশ নদীতে চলে গেছে।
তারা জানান, ফরিদপুর নদীবন্দরের কয়েকশ মিটারের মধ্যে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্দরটি। এ ছাড়া অপর প্রান্তের আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গীসহ অন্তত চার-পাঁচটি গ্রামের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম কিছুটা শিথিল থাকার সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বালুখেকোরা। বিভিন্ন জেলা থেকে ড্রেজার ভাড়া করে এনেও বালু তোলা হচ্ছে।
নদীপাড়ের বাসিন্দা নাজির বিশ্বাসের ডাঙ্গীর আব্দুর রব, মো. রনিসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে বালু তোলার এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন, ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকিরসহ মজিবর শেখ, আলম শেখ, শাওন শেখ ও রাজা ফকির। তারা দীর্ঘদিন ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। এদের মধ্যে আলম শেখ নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীতে নির্মিত সেতু-সংলগ্ন এলাকায় বালু খালাস করছেন। এতে সেতুটি ঝুঁকিতে পড়বে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে গেলেও হেনস্তার শিকার হন। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চান না।
অভিযোগ অস্বীকার করে ডিক্রিরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকির ও নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (ফরিদপুর নদীবন্দর) রুবায়েত হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে থাকে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এদের বিরুদ্ধে একাধিকবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদ্মার একটি অংশকে জলমহাল করে দিলে বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য কমানো যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায়শ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় কারা জড়িত, সে বিষয়ে সবসময় নিশ্চিত হওয়া যায় না। এতে সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যাচ্ছে না।
- বিষয় :
- বালুদস্যু