দুর্নীতির অভিযোগে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা, পদত্যাগ দাবি
সাভারের নিটারে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৩
সাভারের নয়ারহাট এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) সাবেক অ্যাডভাইজারের অনুসারী দুর্নীতিবাজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে আশুলিয়ার কোহিনুর গেট এলাকায় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। এর আগে, গত রোববার বিকেল ৩টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর পদত্যাগ, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষক নিয়োগ, ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ ক্যাম্পাস পুনর্গঠনে নানা দাবি তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে নানা সময় শিক্ষার্থীরা কোনো কথা বলতে চাইলেও প্রশাসন তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। সম্প্রতি সরকার পতনের পর গত ৩১ আগস্ট ক্যাম্পাস খুলে
দেওয়া হয়। এর পরদিনই নানা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী সিসার হায়দার জানান, কয়েক বছর ধরে নিটারের সাবেক অ্যাডভাইজার ড. মিজানুর রহমান নানা অনিয়ম করে আসছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। দুই দিনের আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু পদত্যাগ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তাঁরই অনুসারীরা এখনও ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে।
অভিযুক্ত ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর নামসহ একটি তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ প্রকাশ করে। যেখানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ওই অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগ স্বীকার করে তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি জানান। এর মধ্যে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হক প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু এর পরও দুপুর ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
নিটারের টেক্সটাইল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব জানান, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় তাদের ছোটখাটো নানা দাবি প্রশাসনকে জানাতে চেয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কথাই কখনও গুরুত্ব দেয়নি। বরং তাদের অভিভাবককে হয়রানিসহ নানাভাবে অপদস্থ করে আসছিল। এ কারণেই বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। শিক্ষার্থীরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। তারা পদত্যাগ করার পর ক্যাম্পাস পুনর্গঠনে যেসব দাবি রয়েছে, সেসব কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরবেন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ছাত্রী হলে ছোট একেকটি কক্ষে আটজন করে রাখা হয়। একটি ছোট বিছানায় দু’জনকে থাকতে হয়। ছাত্রী হলের ভেতরে পুরুষ শিক্ষকদের কোয়ার্টার রয়েছে। নারী শিক্ষকরা সেখানে পরিবারসহ থাকেন। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হয়। অভিভাবক কিংবা কোনো স্বজন এসে থাকতে পারেন না। এমনকি তাদের সহপাঠীরাও হলের ভেতরে ঢুকতে পারেন না। তুচ্ছ ঘটনায় ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অভিভাবক ডেকে অপমান করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোটখাটো ঘটনায় অভিভাবককে ফোন করে চারিত্রিক বিষয়ে কটু কথা বলা, পোশাক নিয়ে কুমন্তব্য করাসহ মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসবের জেরেই তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি।
নিটারের রেজিস্ট্রার ইকবাল রেজা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রোববার রাতে ওই ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। তারা আরও অনেক দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সহকারী প্রক্টর ইন্দ্রজিত পাল বলেন, অনেক শিক্ষককে দুর্নীতিবাজ বলে স্বীকারোক্তি নিয়ে পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষার্থীরা বাধ্য করছেন। কিন্তু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মীচারীরা রাজি না হওয়ায় তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
- বিষয় :
- পদত্যাগের দাবি