নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
গ্রন্থাগারিক পদে দুই ব্যক্তি, এমপিওভুক্তিতে জটিলতা
ফাইল ছবি
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:৪৯
নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ পান আলেয়া খাতুন। তাঁর নিয়োগ বহাল রেখে পরিচালনা পর্ষদ ১৪ বছর পর একই পদে নিয়োগ দেয় তাসলিমা আক্তারকে। এতদিন এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও পাত্তা দেননি আওয়ামীপন্থি সাবেক সভাপতি।
হাসিনা সরকারের পতনের পর ন্যায় বিচারের আশায় মঙ্গলবার দুপুরে নিয়োগের বৈধতা তুলে ধরে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী আলেয়া খাতুন। তাঁর দাবি, সাবেক সভাপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁকে বঞ্চিত করেছেন।
তবে পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলছেন, আলেয়া খাতুনের নিয়োগে ক্রটি ছিল। তাই বিধি অনুযায়ী তাসলিমা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আলেয়া খাতুনের নিয়োগে কী ত্রুটি আছে– এ প্রশ্ন করা হলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। ২০০৫ সালে চালু করা হয় কলেজ শাখা। এমপিওভুক্ত না হলেও পাঠদানে অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। ওই বছরের ১৩ মার্চ বিভিন্ন পদে ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই বছর বিধি অনুযায়ী তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দেন স্থানীয় বাসিন্দা আলেয়া খাতুনকে। ১৪ বছর পর একই পদে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তাসলিমা খাতুন নামের আরেক নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে একই পদে দুই ব্যক্তিই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। এতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বৈধ নিয়োগ সত্ত্বেও এমপিওভুক্তি আটকে যায় আলেয়া খাতুনের।
সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করে আলেয়া খাতুন বলেন, ‘বিনা বেতনে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। ১৪ বছর পর একই পদে অবৈধভাবে অন্য একজনকে নিয়োগ দেন আওয়ামীপন্থি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বৈধ নিয়োগ হওয়া সত্ত্বেও আটকে যায় এমপিওভুক্তি। তারা আমার প্রতি অবিচার করেছেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পান। সে সময় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাঁর মামা রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের প্রভাষক জয়নাল আবেদীনকে এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান। এরপর নিয়োগ দেন তাসলিমা খাতুনকে। এভাবে শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন তিনি।
এ বিষয়ে তাসলিমা খাতুন জানান, পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দিয়েছে। এখন ঝামেলা করা হচ্ছে। তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, সরকারি নিয়োগ বিধি অনুযায়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ রয়েছে ১টি। ওই পদে দু’জনকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জালাল উদ্দিন জানান, আলেয়া বেগম ২০০৫ সালে নিয়োগের পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। একই পদে ২০১৯ সালে নিয়োগ পাওয়া তাসলিমা খাতুনও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন জানান, সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ ফাঁকা থাকায় তাসলিমা নামের এক নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই পদে আগে দেওয়া নিয়োগের কথা তিনি জানতেন না।
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার জানান, একই পদে দুই ব্যক্তির চাকরি করার সুযোগ নেই। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সম্পাদনা:রীমা ইসলাম
- বিষয় :
- অনিয়মের অভিযোগ
- নাটোর
- গুরুদাসপুর