ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

কয়রা উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই এক যুগ ধরে

বিভেদের ফাঁদে বিএনপি

বিভেদের ফাঁদে বিএনপি

ফাইল ছবি

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৯:২৩

খুলনার কয়রা উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি এক যুগেও গঠিত না হওয়ায় দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বিবাদ। এ জন্য উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলামের অসহযোগিতা ও উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন একাংশের নেতারা। তাদের অভিযোগ, ওই নেতা নিজের অনুসারী কয়েকজনকে দিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে নেতাকর্মীর মধ্যে বিভাজন বেড়েছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেন মোমরেজুল ইসলাম।

কয়রা উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় ২০১২ সালে। তখন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন যথাক্রমে মোমেরেজুল ইসলাম ও শেখ আব্দুর রশিদ। ২০১২ সালে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে মোমরেজুল ইসলামকেই আহ্বায়ক করা হয়। তবে সদস্য সচিব হিসেবে বেছে নেওয়া হয় উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল আমিন বাবুলকে। পরে দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে শীর্ষ দুই পদে বহাল থাকেন মোমরেজুল ইসলাম ও নুরুল আমিন বাবুলই। তারা কোনো দফায়ই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়। এতে দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে বাড়তে থাকে বিভাজন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক নেতার অভিযোগ, একজন জ্যেষ্ঠ নেতার অসহযোগিতা ও উদাসীনতার কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার বাইরে থেকে পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে দল পরিচালনার চেষ্টা করেছেন। এতে দলে বিভেদ বাড়ার পাশাপাশি স্পষ্ট হয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতাও। জানা গেছে, মোমরেজুল ইসলামই সেই নেতা। 

দলীয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে দ্বিতীয় দফায় করা আহ্বায়ক কমিটিতে ৯ জন স্থান পান। এতেও সদস্য সচিব হন নুরুল আমিন বাবুল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ৪৯ সদস্য নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় খুলনা জেলা কমিটি। এতেও ওই দু’জন স্বপদে বহাল থাকেন। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে উপজেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তা উপেক্ষিত হলে জেলা কমিটি থেকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় আহ্বায়ককে। এতে সাড়া দেননি মোমরেজুল ইসলাম। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে গত ২১ আগস্ট উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে কমিটি করা হয়। এসব কমিটির নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিযোগ, আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। কয়েকজন অনুসারীর মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করেন। প্রায় এক যুগ ধরে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না। এতে স্থানীয়ভাবে দলের নেতাকর্মীর মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল আমিন বাবুল বলেন, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর দলের বিচ্ছিন্ন নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় দলের আহ্বায়ক কয়েকজন কনিষ্ঠ নেতার মাধ্যমে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছেন। বিষয়টিকে তিনি দেখছেন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন অপচেষ্টা হিসেবে। 

এ কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলা বকস বলেন, বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন। সরকার পতনের পর তারা সংগঠিত হয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন কমিটি হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে দলের আহ্বায়ক ও তাঁর কয়েকজন অনুসারী পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা দিচ্ছেন। বিষয়টি দলে বিভাজন আনার পরিকল্পিত চক্রান্ত। 

মোমরেজুল ইসলাম দাবি করেন, ‘কমিটির আহ্বায়ককে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। তাই সবাইকে নিয়ে সুধী সমাবেশ করার চেষ্টা করছি।’ এলাকায় না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় একাধিক মামলায় আসামি হয়েছি। যে কারণে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতে হয়েছে, এটা সত্যি।’ তবে এলাকার নেতাকর্মীর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখেছেন বলে দাবি করেন তিনি। 

খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম বাপ্পি মঙ্গলবার বলেন, সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে কয়রা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে বারবার বলা হয়েছে। তিনি এতে উদাসীনতা দেখিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য বলা হলেও ব্যক্তিগত সমস্যার অজুহাতে সময় নষ্ট করেছেন। একাধিকবার কারণ দর্শাতে বলা হলেও এড়িয়ে গেছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কঠোর সিদ্ধান্তের কথা ভাবছেন জেলার নেতারা।

 

আরও পড়ুন

×