হরিপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা দেন বাবুর্চি
হাসপাতালে চলছে কবিরাজি চিকিৎসা

রাকিব উদ্দিন
মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৭
হাসপাতালের বাবুর্চি রাকিব উদ্দিন। রান্নাবান্না করাই তাঁর কাজ। তবে তিনি নিজেকে কখনও কবিরাজ কিংবা স্বাস্থ্য সহকারী বলে পরিচয় দেন, আবার কখনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করেন না। একই ব্যক্তি একেক সময় নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দিয়ে সেবার নামে করছেন প্রতারণা। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি ওষুধ বিক্রি এবং নারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
এই রাকিব উদ্দিন সরাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাবুর্চি। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে প্রেষণে পাঠানো হয় নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর পর সেখান থেকে পাঠানো হয় হরিপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এখানেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার মান খুবই নাজুক। এখানে নিয়মিত একজন মেডিকেল অফিসার, একজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ ও একজন অফিস সহায়ক থাকার কথা। তবে সেখানকার চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম চলছে একজন বাবুর্চি দিয়ে।
হরিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে সুনসান নীরবতা। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বেশ কিছু যুবক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরোনো ভবনে বসে মাদক সেবন করছে। জুয়ার আসর বসিয়েছে আরও কয়েক যুবক। আর ভেতরে বাবুর্চি রাকিব স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এরই মধ্যে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান যুবকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিত্যক্ত ভবনটিতে নিয়মিত মাদক ও জুয়ার আসর বসলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল মিয়া জানান, হরিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে ওষুধ দেয় না। দুই পাতা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পেতে ১০০ টাকা দিতে হয়। বেশ কয়েকবার তিনিও টাকা দিয়ে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নিয়েছেন।
একই ধরনের অভিযোগ করলেন আকলিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ। তাঁর শিশুসন্তানের ঠান্ডা-জ্বর হলে টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে সরকারি ওষুধ।
তানজিলা আক্তার নামে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা সমকালকে বলেন, ‘আমরা যারা বৃদ্ধ মানুষ আছি, তাদের কোনো ওষুধপাতি দেয় না। জোয়ান-জোয়ান বেইট্টাইন (তরুণী) গেলে ওষুধ দেয়।’
বাবুর্চি রাকিবের কাছে ওষুধের জন্য গিয়ে এলাকার ২০-৩০ জন নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দুলাল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, তরুণীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন রাকিব। অন্যরা চলে গেলে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে খারাপ ইঙ্গিত দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগরের অধিকাংশ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীই অন্যান্য উপজেলা থেকে আসা। অনিয়মের শাস্তি হিসেবে এখানে বদলি করে পাঠানো হয়েছে। তাই চাইলেই তাদের দিয়ে ভালো কাজ করানো সম্ভব না। নাসিরনগরকে মূলত ‘পানিশমেন্ট উপজেলা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুর্চি রাকিব উদ্দিনের দাবি, সব অভিযোগ
বানোয়াট। কিছু খারাপ লোক তাঁর মানসম্মান নষ্ট করতে এসব করছে।
নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, ‘বাবুর্চি রাকিব উদ্দিনের বিরুদ্ধে হাসপাতালে কবিরাজি করাসহ নানা অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। জনবল নিয়োগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনবল পেলে হরিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পদায়ন করা হবে।’
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন সমকালকে জানান, হরিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মচারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওষুধ বিক্রির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
- বিষয় :
- চিকিৎসা