কুষ্টিয়ায় নদীতে বিলীন জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার

কুষ্টিয়ার মিরপুরে পদ্মা নদীতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের টাওয়ার সমকাল
মিরপুর (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:০৪
পদ্মা নদীর ভাঙনে কুষ্টিয়ার মিরপুরে গত এক মাসে কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চরম ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের একটি টাওয়ার সম্পূর্ণভাবে নদীতে ভেঙে পড়ে। উপজেলার বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবনগর গ্রামে আরও ৬টি টাওয়ার ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরও এখানে চর ছিল। এক মাসে ৫০০ মিটার ভেঙে নদী গ্রামের দিকে চলে আসছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় ঘেরাও, স্মারকলিপি প্রদান ও মহাসড়ক অবরোধ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাউবোর কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে যান। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না।
কুষ্টিয়ার বটতৈল গ্রিডের প্রকৌশলী আবু তালেব বলেন, ঝুঁকির বিষয়টি আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। এ জন্য এই লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় জাতীয় বিদু্ৎ সঞ্চালন লাইনে কোনো প্রভাব পড়বে না। এই লাইন দিয়ে ভেড়ামারা থেকে রাজবাড়ীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন বিকল্প উপায়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। সাহেবনগর গ্রামে আরও ছয়টি টাওয়ার ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে টাওয়ার ভাঙার পরপরই নদীতে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন গ্রামবাসী। বেলা ৩টা পর্যন্ত সড়ক আটকে তারা আন্দোলন চালিয়ে যান। এতে সড়কের উভয় পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পোর্টের জন্য পদ্মার মূল প্রবাহ চ্যানেলে প্রায় ৫০০ মিটার গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদী তার গতিপথ হারিয়েছে। নতুন গতিপথের সন্ধানেই পদ্মা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার হাজারো মানুষের। গত এক মাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক, দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প, ৪১০ মেগা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অবিলম্বে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার বলেন, নদীভাঙন হচ্ছে– এটা সত্য। প্রায় দিনই সেখানে আন্দোলন হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
পাউবো-কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যচুক্তি প্রক্রিয়াধীন। পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীতে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদীর ডান তীরে কুষ্টিয়ার অংশে ভাঙন বাড়ছে। ভাঙনকবলিত স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
- বিষয় :
- বিদ্যুতায়ন