সাঁইজির বারামখানায় বসছে সাধুর হাট

কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে ভক্তের ভিড়। বুধবার বিকেলে। ছবি: সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া ও কুমারখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ | ০৫:২৬ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ | ০৫:২৬
আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস আজ ১৭ অক্টোবর (১ কার্তিক)। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় ‘বারামখানা’খ্যাত লালন শাহের বিখ্যাত আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও লালন মেলার আয়োজন করেছে লালন একাডেমি।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সফল করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা। বসছে সাধুর হাট; লালনভক্ত ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। অনুষ্ঠানমালা চলবে আগামী শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। গতকাল বুধবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শারমিন আখতার।
এদিকে ফকির লালন শাহর তিরোধান দিবসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই হাজারো লালনভক্ত-অনুসারী ছেঁউড়িয়ায় ভিড় জমিয়েছেন। লালন মেলা উপলক্ষে কালী নদীপাড়ের মাঠে বসেছে মেলা। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল কালী নদীতীরের বিশাল মাঠে (পশ্চিমে) শতাধিক বাউলভক্ত-অনুসারী তাঁবু গেড়ে আস্তানা তৈরি করেছেন। পৃথক এসব আস্তানার মধ্যে অবস্থান নেওয়া বাউলরা একতারা-দোতারাসহ নানা বাদ্যের তালে গেয়ে চলেছেন লালন শাহ রচিত গান। মাঠের দক্ষিণে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ এবং উত্তরে বসেছে নানা পণ্যসামগ্রীর দোকান। এ ছাড়া লালন শাহের সমাধির পাশের উন্মুক্ত শেডের নিচেও বসেছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীরা। সেখানেও চলছে লালনের গান; আলোচনা হচ্ছে ফকির লালনের অমর সব বাণী নিয়ে। স্থানীয় লালন অনুসারী ফারুক সাধু জানান, এবার সাঁইজির ভক্ত আলাউদ্দিন সাধুর (লালন আখড়া-সংলগ্ন) আস্তানায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় ভক্ত-অনুসারীসহ বহিরাগত ভক্ত-অনুসারীরাও যোগ দেবেন। তিনি বলেন, এখানে আসি মূলত নিরিবিলি পরিবেশে সাঁইজির মর্মবাণী চর্চাসহ ভক্তদের উজ্জীবিত করা ও পরস্পর ভাব বিনিময়ের জন্য।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল ফকির লালন শাহের দেহত্যাগের পর থেকে তাঁর স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এমন আয়োজন করে আসছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শারমিন আখতার বলেন, তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও লালন মেলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। লালন শাহর মাজার প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
শিল্পকলায় ৩ দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব
শিল্পকলা একাডেমিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব। গতকাল জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্মরণোৎসবের খুটিনাটি তুলে ধরেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ, বিভিন্ন বিভাগের নবনিযুক্ত পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
মহাপরিচালক জানান, তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রেশন ভিত্তিতে স্মরণোৎসবে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকবে। লালন স্মরণোৎসবের মধ্য দিয়েই রাজধানীকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক স্থবিরতা কিছুটা কাটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে আয়োজনের ব্যয় একাডেমি ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হবে বলেও তিনি জানান। পরে বিভাগভিত্তিক তিন দিনের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিচালকরা।
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. জামিল আহমেদ জানান, শিল্পকলা একাডেমির বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন সাত মিলনায়তনের নামকরণের জন্য সাংবাদিকদের কাছে সাত গুণী ব্যক্তিত্বের নাম আহ্বান করেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনতে শিল্পকলা একাডেমিতে তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের বিষয় তুলে ধরেন তিনি।