‘সহরাই পরব’ উদযাপনে মেতেছেন চলনবিলের আদিবাসীরা

ছবি- সমকাল
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩:১৭ | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৪:৩৫
আদিবাসীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘সহরাই পরব’ উদযাপনে মেতেছেন চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও রায়গঞ্জ এলাকার গ্রামীণ আদিবাসী পল্লীর কৃষিজীবী পরিবারের সদস্যরা। প্রতিবারের মতো বাড়ির উঠান, দরজা ও গোয়ালঘর লেপার পর চালের গুঁড়া দিয়ে নারীরা এঁকেছে বিচিত্র ধরনের আলপনা।
উৎসবের পূর্ব মুহূর্তে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরি, দিয়ালি জ্বালানো, গোয়ালঘরসহ পুরো বাড়ি পরিষ্কারে ব্যস্ত নারীরা। সঙ্গে গবাদি পশুর গা ধুইয়ে শিংয়ে তেল-সিঁদুরে রাঙানো হয়েছে। চারদিকে পুরোদস্তর চলছে আদিবাসীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসবের আমেজ।
বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী ‘সহরাই পরব’ বা পার্বণ উপলক্ষে চলনবিলের আদিবাসী অধ্যুষিত অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি এলাকায় দেখা মিলে বাংলার চিরায়িত এমন দৃশ্যের। আদিবাসী পল্লীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ধর্মীয় পরব বা পার্বণ নামের অন্যতম উৎসব সহরাই বা গোয়াল পূজা। মূলত বাংলা সনের কার্তিকের অমাবস্যায় আদিবাসী মাহাতো, উরাও, মাহালিসহ বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মানুষ এ উৎসবে সামিল হন।
চলনবিলাঞ্চলের আদিবাসীরা শত শত বছরের ধর্মীয় সহরাই পরব এখনও বংশ পরম্পরায় সুখ-সমৃদ্ধি আর শক্তির দেবতা হিসেবে গোয়াল দেবতার পূজা করে আসছেন। এ বছরও এর ব্যত্যয় হয়নি। কার্তিক মাসের অমাবস্যার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া সহরাই পরব আগামী শনিবার রাতে ঝুমুর বা জাগানিয়া নাচের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এমনটিই জানান, রায়গঞ্জের পশ্চিম আটঘনিয়া গ্রামের কুড়মালি ভাষার গবেষক উজ্জ্বল মাহাতো।
গুড়পিপুল গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মেঘলা মাহাতো ও গুল্টা এলাকার মৌমিতা রানী মাহাতো জানান, কার্তিকের অমাবস্যায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কৃষিজীবী পরিবার চাষাবাদে ব্যবহৃত গরুর প্রতি যত্নবান হওয়ার কারণ প্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি মমত্ববোধ বা ভালবাসার জানান দেওয়া হয়।
মাধাইনগর গ্রামের স্মৃতি মাহাতোর ভাষ্য, হেমন্তকালে জমির কঠিন মাটিকে চাষযোগ্য করার জন্য ধর্মীয় রীতি মেনে তারা গবাদি পশুর যত্ন নেন। আর আগামীর জন্য কৃষিজ ফসল ফলানোর কাজে ভাল কিছু প্রত্যাশায় এ সময় গোয়ালপূজায় মনোনিবেশ করেন আদিবাসী নারী ও পুরুষরা।
অমাবস্যার রাতে বাড়িতে, ধর্মীয় উপসনালয়ে দিয়ালি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় দ্বিতীয় দিনে হবে মহিষ নাচ। আর পরবের শেষ দিনে ঢাক-ঢোল, বাঁশি ও মাদলের সুরে ঝুমুর বা জাগরণ নৃত্যে মেতে ওঠে শিশু-কিশোরসহ সব শ্রেণীর মানুষ।
সব শেষে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভে সমবেত ও একক প্রার্থনা সম্পন্ন করবে আদিবাসীরা। আতপ চালের সঙ্গে পাঁঠার মাথার মাংস দিয়ে রান্না হবে খিচুড়ি। সঙ্গে নানা ধরনের পিঠা দিয়ে চলবে আপ্যায়ন।