ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাঁকো ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগে ৫ গ্রামবাসী

সাঁকো ভেঙে পড়ায়  দুর্ভোগে ৫ গ্রামবাসী

নদী

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৯

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ১০ নম্বর কুশোডাঙ্গা ও হেলাতলা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বেত্রবতী নদীতে নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কোঠাবাড়ি-রায়টা গ্রামসহ অন্তত ৫ গ্রামের মানুষ। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ড্রামের ভেলায় নদী পারাপার হচ্ছেন তারা। এতে পারপারে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। বেত্রবতী নদীতে বাঁশের সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
হেলাতলা ইউনিয়নের কোঠাবাড়ি গ্রামের ঠিক বিপরীতে কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের রায়টা গ্রাম। এই দুই গ্রামকে বিভক্ত করেছে বেত্রবতী। নদীর দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ ও ৪ ফুট চওড়া এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ৪ গ্রামের 
মানুষ চলাচল করেন। সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় কোঠাবাড়ি ও রায়টাসহ হেলাতলা, শুভঙ্করকাটি ও আলাইপুর গ্রামবাসীও নদী পারাপারে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। 
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কোঠাবাড়ি ও রায়টা গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, কোঠাবাড়ি ও রায়টা গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বেত্রবতী নদী। স্রোত না থাকায় নদীটি শ্যাওলা-কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে গেছে। নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়েছে। এতে কোমলমতি স্কুলপড়ুয়াসহ বিপুল জনগোষ্ঠী নদী পারাপারে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। 
রায়টা গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, নদীর পশ্চিম পাশের কোঠাবাড়ি ও হেলাতলা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ শাকসবজি আসে রায়টা বাজারে। হঠাৎ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় রায়টার সবজিবাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া কোঠাবাড়ি গ্রামের স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা এই সাঁকো পেরিয়ে রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে আসত। সাঁকো ভেঙে পড়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। 
রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান জানান, নদীর বিপরীত পাশের গ্রাম কোঠাবাড়ি থেকে তাঁর স্কুলে ৫০–৬০ জনের মতো ছাত্রছাত্রী আসে। এদের সবাইকেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের এই সাঁকো দিয়েই স্কুলে আসতে হয়। এখন সাঁকোটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিশুরা ভীষণ অসুবিধায় পড়েছে। নদী পারাপারের জন্য রায়টা গ্রামের বাসিন্দা শেখ সোবহান ড্রাম ব্যবহার করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভাসমান ভেলা বানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে এই ড্রামের ভেলায় চড়ে প্রতিদিন স্কুলে আসতে হয়। 
নদী পার হওয়ায় অপেক্ষায় থাকা কোঠাবাড়ি গ্রামের শিক্ষার্থী  নুসরাত, তৃষা, মিম, মরিয়ম, ওয়াছিউর জানায়, তারা সবাই রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী। বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় তাদের সময়মতো স্কুলে আসতে ও বাড়ি ফিরতে অনেক কষ্ট হয়। ভাসমান ভেলায় চড়ে নদী পারাপার হতে তারা ভয়ে থাকে। নদীতে একটা পাকা সেতু থাকলে খুব ভালো হতো। 
হেলাতলা গ্রামের আবু সাইফুল্লাহ সবুজ বলেন, রায়টায় শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের দিনগুলোতে কোঠাবাড়ি, হেলাতলা ও শুভঙ্করকাটি গ্রামের মানুষের এই সাঁকো পেরিয়ে হাটে যেতে হয়। 
হেলাতলা গ্রামের আবু জাফর, কোঠাবাড়ি গ্রামের ফিরোজ, আলাইপুর গ্রামের নুরুল খান জানান, বেত্রবতী নদীতে একটি কংক্রিট সেতু নির্মাণ করা হলে যানবাহনসহ নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ হতো। এ ছাড়া কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের ফসল ও মালামাল পরিবহন করতে পারতেন। নদীর উভয় পাড়ে পাকা সড়ক করা হয়েছে অনেক আগেই। একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা গেলে দুই তীরের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যেত। 
এ বিষয়ে হেলতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাঈদ আলী গাজী জানান, এলাকার মানুষ বেত্রবতী নদীতে নির্মিত বাঁশের সাঁকোর সংস্কার আর চান না, একটি স্থায়ী সেতু  নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করবেন। এটি নির্মাণ করা হলে হেলাতলার সঙ্গে কয়লা ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে। 
 

আরও পড়ুন

×