বন্ধ ল্যাবে নষ্ট হচ্ছে ল্যাপটপ
বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি কক্ষে থাকা বেশির ভাগ ল্যাপটপই নষ্ট সমকাল
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩০
২০২১-২২ অর্থবছরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ১৮টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টি বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে সরকার। উদ্দেশ্য ছিল, শিশু-কিশোরদের আইসিটি শিক্ষায় উন্নতি। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রায় কোটি টাকা খরচ করা হয়। তবে ওই প্রকল্পের নামে পুকুরচুরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। যেসব ল্যাবে দেওয়া নিম্নমানের ল্যাপটপের বেশির ভাগই অকেজো। সঠিক তদারকির অভাবে দিনের পর দিন বন্ধ পড়ে আছে এসব ডিজিটাল ল্যাব।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আইসিটি, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পারদর্শী করার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তর শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় আসে উপজেলার ১১টি বিদ্যালয়। প্রতি ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপ, একটি করে প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি স্মার্ট এলইডি টেলিভিশন, ওয়েব ক্যামেরা, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি, একটি করে ইনস্ট্রাক্টর টেবিল ও চেয়ার; ১৬টি করে স্টুডেন্টস টেবিল ও ৩২টি করে চেয়ার দেওয়া হয়। প্রতিটি ল্যাবের রেনোভেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য আরও ৬৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নাম পরিবর্তন করে আইসিটি ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে।
উপজেলার বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও ধুল্লা ভূবন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায়, একাধিক কক্ষে ল্যাপটপগুলো অযত্নে পড়ে আছে। এগুলো অকেজো হওয়ায় বেশির ভাগ সময় ল্যাবের কক্ষ বন্ধ থাকে। ল্যাপটপগুলো দেওয়ার পর থেকেই বেশির ভাগ ছিল নষ্ট। ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও বাস্তবে শিক্ষকরা এগুলো ব্যবহার করতে পারছেন না।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা ল্যাব পরিচালনার নীতিমালায় বলা হয়েছিল, ল্যাবের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কর্মদিবসে ডিজিটাল ল্যাব আংশিক খোলা রাখতে হবে, যাতে যে কোনো সময় ছাত্রছাত্রীরা ল্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে।
বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হলেও ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ৫টিই ছিল অচল। ২০২৩ সালে মোট ১৪টি নষ্ট হয়ে যায়। এলইডি টিভি চলে না। কয়েকটি ল্যাপটপ আংশিক সচল। ওয়াইফাইয়ের রাউটারে সংযোগ পাওয়া যায় না। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য ওয়েব ক্যামেরাও চলে না।
এই শিক্ষক আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আইসিটি লার্নিং সেন্টার ও সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) থেকে এইচপি নামে ২১টি ল্যাপটপ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০টিই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বরাদ্দ না থাকায় সারানো যাচ্ছে না।
কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, মাঝেমধ্যে আইসিটি ক্লাস নেন শিক্ষকরা। বেশির ভাগ সময়ই ল্যাব বন্ধ থাকে। ল্যাবের ভেতর আলোকস্বল্পতা রয়েছে। ল্যাপটপ ও কম্পিউটার টেবিলগুলোতে ময়লা জমে আছে।
ধুল্লা ভূবন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো. সেলিম হোসেন বলেন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ বিদ্যালয়ে ৪০টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার অনুদান পেয়েছিলেন। এর মধ্যে আইসিটির ১৭টি চালু রয়েছে। তবে এর আয়ুষ্কালও শেষের দিকে। ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায় না। ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত আইসিটি ক্লাস নেওয়ায় কিছু ল্যাপটপ ভালো আছে। বাকিগুলো নষ্ট। তিনি বলেন, ওয়ালটনের ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে। এসব চলে তো চলে না।
সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, এসব ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি ছিল এক বছরের। এর মধ্যে নষ্ট হলে কোম্পানির ঠিক করে দেওয়ার কথা। ওয়ারেন্টির শেষে নষ্ট হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঠিক করতে হবে। ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম নষ্ট হলে ঠিক করতে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তাই ফেলে রেখেছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে তিনি মনে করেন, আইসিটি শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিলে হয়তো ভালো থাকত। ল্যাবগুলো বন্ধ থাকায় ল্যাপটপের ব্যাটারি চার্জ করা হয় না। এতেই বেশির ভাগ অচল হয়ে পড়ে।
- বিষয় :
- ল্যাপটপ