ঢাকা রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চট্টগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণ

ভুয়া ওয়ারিশে লোপাট সাড়ে ৯ কোটি টাকা

ভুয়া ওয়ারিশে লোপাট সাড়ে ৯ কোটি টাকা

ফাইল ছবি

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪০

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের প্রায় ৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া ওয়ারিশের অধীনে সনদ ইস্যু করেছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগদলীয় তিন ইউপি চেয়ারম্যান। পরে ভুক্তভোগীরা উপজেলার মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মাস্টার, মায়ানী ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী ও সদরের ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন মাস্টার ও কবির আহম্মদ নিজামী ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতির ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত ভুল দাবি করেছেন। একই সঙ্গে অর্থ আত্মসাতে জড়িত নন বলেও জানান তারা। আর চেয়ারম্যান শামছুল আলমের ভাষ্য, দোকানের স্ক্যান কপিতে জাল স্বাক্ষর বসিয়ে সনদ বানানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ ধরনের সনদ কাউকে দেওয়া হয়নি।
আদালত সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়নের জাফরাবাদের মৃত হেরাজুল হকের ছেলে শফিউল আলম ১৯৮৪ সালে মারা যান। তাঁর ছেলে সলিমুল্লাহ দিদার; ২০১৮ সালের সনদে তিনি ওয়ারিশ। কিন্তু ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা ওয়ারিশ সনদে দিদারের পরিবর্তে নাম বসেছে আবুল খায়েরের। আবুল খায়েরের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম ঠিক থাকলেও মায়ের নাম নাসিমা বেগমের স্থলে আছে হোনদন বেগম। এর পরও নকল ওয়ারিশ সনদ দিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা তুলে মেরে দেন খায়ের।
সলিমুল্লাহ দিদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে অন্যদের সঙ্গে আমার ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর কারণে আমার মতো অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।’
ওয়ারিশসূত্রে মহিন উদ্দিন চৌধুরী জমির প্রকৃত মালিক হলেও প্রতারকরা নকল সনদ ইস্যু করে তাঁর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অর্থ লোপাটে মায়ানী ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামীসহ ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই। মামলা হলে গত ২ জুলাই নিজামীকে কারাগারে যেতে হয়। মহিন উদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ওয়ারিশ সনদ জালিয়াতির সত্যতা পেয়ে আদালত চেয়ারম্যান নিজামীকে কারাগারে পাঠান। তিনি নকল সনদ দিয়ে প্রতারকদের সঙ্গে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
একইভাবে প্রকৃত ওয়ারিশ মিরসরাইয়ের দক্ষিণ মঘাদিয়ার বাসিন্দা নুরুল গনির জমির ক্ষতিপূরণের ৩ কোটি ৭১ লাখ আত্মসাৎ করেছেন সৌদামিনি বণিক। পরে চেয়ারম্যান ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করেন তিনি। এ ছাড়া সনদ ও মূল মালিকের সই জাল করে ক্ষতিপূরণের ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা আত্মসাতের আরেক ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে পৃথক মামলা করেন মিরসরাই পৌরসভার বাসিন্দা নুর উদ্দিন। মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুল আলমের প্যাড ব্যবহার করে দাদি ও বাবাকে মৃত বানিয়ে দুটি নকল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন এক প্রতারক। সেই সনদ দিয়ে ৫১ শতক জমি নিজের নামে নামজারি করে অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি। 
আরেক ঘটনায় সনদ ও জমির মূল মালিকের সই জাল করে ক্ষতিপূরণের ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৮২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন মিরসরাই পৌরসভার বাসিন্দা নুর উদ্দিন। আসামির তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইনসহ ৯ জন রয়েছেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি এলএ শাখায় আবেদন করেন নুর উদ্দিন। কিন্তু তাঁকে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে সার্ভেয়ার আবদুর রবের কারসাজিতে সই জাল করে সৌদামিনি বণিককে চেক দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন আসামিরা।

আরও পড়ুন

×