ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নাচে-গানে নবান্ন উৎসব

নাচে-গানে নবান্ন উৎসব

জারিগান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। শনিবার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কাউটিয়া গ্রামে সমকাল

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৭

বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজের আবহমান ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রত্যয়ে মানিকগঞ্জে নবান্ন উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার ঘিওর উপজেলার কাউটিয়া গ্রামে ছিল এ আয়োজন। স্থানীয় প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রে আয়োজিত উৎসবে নানা শ্রেণিপেশার শত শত  নারী-পুরুষ অংশ নেন।
শনিবার সকাল ৮টায় স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে আমন ধান কাটা শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অতিথিরা। জারি-সারি গান আর হইহুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে নিমিষেই এক বিঘা জমির ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। সেই ধান মাড়াই করা হয় ক্ষেতের পাশে।
সেখান থেকে ধান বেতের কাঠায় ভরে নেওয়া হয় ঢেঁকিঘরে। ঢেঁকিছাঁটা নতুন চালের গুঁড়া, ডাবের পানি, নারিকেল, কলা, গুড় দিয়ে নবান্ন আহারের আয়োজন করা হয়। সঙ্গে ছিল মুঠো পিঠা, সেমাই  পিঠা ও পায়েস ভোজন। নারীরা চালের গুঁড়া দিয়ে উৎসবের আলপনা আঁকেন বাড়ির উঠোনে। এরপর কলাপাতায় আহার পর্ব চলে। 
পরে শুরু হয় নবান্নের ওপর আলোচনা সভা, শস্য প্রদর্শনী, নাচ, বাউল গান, শস্যের গীত, রম্য কৌতুক ও বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলাধুলা। উৎসব আঙিনাজুড়ে বসে মাটির তৈজসপত্র, নকশীকাঁথা ও তাঁতের তৈরি গামছা ও শাড়ির মেলা।
গান পরিবেশন করেন টাঙ্গাইলের গীতিকবি কৃষক আক্কাছ আলী, স্থানীয় গাজীর গানের বয়াতি আওলাত গায়েন, বাউল শিল্পী আসলাম উদ্দিন বাচ্চু, মো. সাজাহান, সোনাজুদ্দিন, খোরশেদ বয়াতি। এ ছাড়া ধান ভানার গীত পরিবেশন করেন স্থানীয় প্রবীণ কৃষানিরা।
প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের সমন্বয়কারী দেলোয়ার জাহানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রাকৃতিক কৃষি গবেষক ইফতেখার আলী, নিরাপদ কৃষি খাদ্য প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা, কুমিল্লা থেকে আসা আইনজীবী বিলকিস আক্তার, শিক্ষক জেসমিন আক্তার, ব্যবসায়ী মাহফুজ শাহীন, মো. সাওয়ম, চট্টগ্রামের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক শাহিন শিরীন, নারী উদ্যোক্তা ডালিমা আক্তার, স্থানীয় কৃষক কালা চাঁদ, ইউপি সদস্য মো. লেবু মিয়া প্রমুখ।
দেলোয়ার জাহান বলেন, সাধারণত কার্তিকের শেষে ও অগ্রহায়ণের শুরুতে আমন ধান ঘরে তোলার সময় এই উৎসব হয়। তারা সপ্তমবারের মতো উৎসবের আয়োজন করেছেন। কৃষকদের পবিত্র শ্রম থেকে কেবল ফসলই উৎপন্ন হয় না। তা থেকে তৈরি হয় সংস্কৃতির উদার আবাহন। প্রজন্মের কাছে নবান্ন উৎসবের রঙ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন আয়োজন করে আসছেন।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×