পঞ্চগড়ে সন্ধ্যার পর শীত, ভোরে ঘনকুয়াশা
দিনে গরম লাগলেও রাতে শীতের কাপড় জড়িয়ে ঘুমাতে হয়। ছবি: সমকাল
সফিকুল আলম, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:১৪ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:৩২
শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। বাড়ছে ঘন কুয়াশা। অক্টোবরের মাঝামাঝি এ জেলায় শীতের আমেজ শুরু হলেও কুয়াশার সঙ্গে শীত শুরু হয় নভেম্বরের প্রথম দিকে। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে কনকনে শীত অনুভূত হয়।
আজ রোববার সকালে চলতি শীত মৌসূমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শনিবার রাতের তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরের এই জেলায় প্রতি বছর শীত মৌসূমে কিছুটা আগেই শীত শুরু হয়। গত কয়েকদিন ধরেই রাতের ও দিনের তাপসমাত্রা কমছে। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় কুয়াশা। রাতভর কুয়াশা ঝড়ে বৃষ্টির মত। সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। এরপর সূর্যের আলোয় মিলিয়ে যায় ঘন কুয়াশা। তবে দিনে বেশ গরম অনুভূত হয়। গত কয়েকদিন ধরে দিনে ২৯ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠা-নামা করছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে জেলায় সর্বোচ্চ ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার আজিম উদ্দীন বলেন, দুই তিনদিন ধরে সন্ধ্যার পর থেকে বেশ শীত লাগছে। ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হলে ঘন কুয়াশা দেখা গেছে। দিনে গরম লাগলেও রাতে শীতের কাপড় জড়িয়ে ঘুমাতে হয়। তবে বর্তমানের শীত বেশ ভালোই লাগছে। কয়েকদিন পর শুরু হবে অসহ্য রকমের শীত।
এদিকে দিনে গরম এবং রাতে শীতের কারণে কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। বিশেষ করে শিশু ও বেশি বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে বা বারান্দায় স্থান নিয়েছেন অনেক রোগী।
একইসঙ্গে শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মানুষরা শীতের কাপড় বের করতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে রাতে পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকদের শীতের কাপড় পড়তে দেখা গেছে। জেলা শহরের লেপ তোষক দোকানেও বেড়েছে কর্মব্যস্ততা।
পঞ্চগড় রাজনগর হাটের তুলা ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। এবারও আমাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কাপড় এবং তুলার দাম বেশি হওয়ায় আগের মত ভিড় নেই। অনেকে সাধ্যের মধ্যে লেপ বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন।
পঞ্চগড়ের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোনের বলেন, অন্য এলাকার তুলনায় পঞ্চগড়ে প্রতি বছর আগেভাগেই শীত শুরু হয়। আর ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণত অনেকেই ভাইরাসজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সীমিত জনবল আর স্থান সংকুলান না হওয়া সত্বেও আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, আজ রোববার সকালে তেঁতুলিয়ায় চলতি শীত মৌসূমের সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি সপ্তাহে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, হিমালয় কন্যা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে অন্য জেলার তুলনায় আগেই শীত শুরু হয়। কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। শীত নিয়ে দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের দূর্ভোগ লাঘবে প্রতি বছরের মত এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা শীতের কম্বলসহ পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের চাহিদা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি।