নবান্ন উৎসবে জামাইদের নিয়ে বসেছে মাছের মেলা
মেলায় দেশীয় নানা প্রজাতির টাটকা মাছে ছিল ভরপুর। ছবি: সমকাল
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:০৯
অগ্রাহয়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে জয়পুরহাটের কালাইয়ের নতুন ধান ঘরে ওঠার আনন্দে মেয়ে-জামাই, বেয়াই-বেয়ানসহ আত্মীয়দের নিয়ে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন কৃষকরা। পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে স্বজনদের নিয়ে কৃষকেরা পালন করেন কাঙ্খিত নবান্ন উৎসব। জামাইদের উদ্যোগে বসে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে এক দিনের মাছের মেলা।
এ দিনকে ঘিরে পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে ভোর ৪টা থেকে দিনব্যাপী চলে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনা-বেচার উৎসব। পঞ্জিকা অনুসারে, অগ্রাহয়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে পাঁচশিরা বাজারে বসে বৃহৎ এ মাছের মেলাটি।
আজ রোববার ভোররাত থেকেই মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার ঢল। মেলায় দেশীয় নানা প্রজাতির টাটকা মাছে ছিল ভরপুর। একই দিনে প্রতিযোগিতা করে মেলা থেকে জামাইরা মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান।
মেলার প্রতিটি দোকানে সাজানো ছিল দেশীয় রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, ব্রিগেটসহ নানা ধরনের মাছ।
এবার মেলায় সর্বোচ্চ ২৯ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায় এবং ১৯ কেজি ওজনের একটি সিলভার কার্প বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়।
মেলা আয়োজন করেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ আগে থেকে মেলার জন্য প্রস্তুতি নেন তারা। এ উপলক্ষে এলাকায় দুই দিনব্যাপী মাইকে প্রচারণাও চালানো হয়।
মেলায় আগত মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘মেলায় পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, মৃগেল ৪শ’ থেকে ১২ শ’ টাকা কেজি এবং চিতল মাছ ১৩ শ’ দুই হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। মাঝারি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার চাপে এবার মাছ বিক্রি হয়েছে বেশি। দাম ছিল স্বাভাবিক। লাভ হয়েছে মোটামুটি।’
মেলায় মাছ কিনতে এসেছে বগুড়া থেকে আগত বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নবান্ন উৎসবে শ্বশুর প্রতি বছরই দাওয়াত করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছি। প্রথা অনুযায়ী, এ মেলা জামাই-মেয়ে উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়, সে কারণে মাছ একটা কিনতেই হয়। এবার ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তারপরও ভাল লাগছে।’
হাতিয়র গ্রামের কৃষক রানা মিয়া বলেন, এই দিনের অপেক্ষায় মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনরা চেয়ে থাকে। কষ্ট হলেও তাদের জন্য আয়োজন করতে হয়। মেলায় এসেছি মাছ কিনতে। ১৩ হাজার টাকায় ১২ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনেছি। বাড়ির সবাই খুশি হবে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, ‘মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠেছে। বড় বড় মাছ দেখে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস বিভাগ চাষীদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে। আগামীতে এই মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।’
- বিষয় :
- জয়পুরহাট