ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ধুঁকছে আন্দোলনে নিহত হান্নানের পরিবার

ধুঁকছে আন্দোলনে নিহত হান্নানের পরিবার

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত পাবনার সাঁথিয়ার আবদুল হান্নানের (মাঝে) পরিবারের এ ছবি শুধুই স্মৃতি সমকাল

 জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা)

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৮

‘ছাত্র-জনতার লংমার্চে অংশ নিয়ে গণভবনে গিয়েছিলাম। বিকেল পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। সন্ধ্যার দিকে বাবা অফিস থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন করে অবস্থান জানতে চান। গণভবনের কথা জানালে তিনি সেখান থেকে আমাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসায় ফিরছিলেন। পথে কাফরুল থানার কাছাকাছি যেতেই গুলি ছোড়ে পুলিশ। হুড়মুড়িয়ে নেমে একটি পিলারের আড়ালে দাঁড়াই। বাবা বাইক ঘোরানোর সময় একটি গুলি এসে লাগে তাঁর পেটে। তিনি শুধু একবার বললেন, সিফাত গুলি লাইগেছে রে ...। এর পর অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। দ্রুত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’ এভাবেই গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বাবা হারানোর করুণ বর্ণনা দেন নিহত আবদুল হান্নানের (৫৭) ছেলে সাইফ আহমেদ খান সিফাত।
আবদুল হান্নানের গ্রামের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর ইউনিয়নের এদ্রাকপুর গ্রামে। তিনি বিমানবাহিনীতে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের (এমইএস) চার্জহ্যান্ড পদে কর্মরত ছিলেন। অস্থায়ী চাকরি হওয়ায় আয় তেমন ছিল না। বেতন-ভাতা যা পেতেন, তা দিয়ে দুই সন্তানের পড়ালেখাসহ টেনেটুনে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসে গেছেন অন্যরা। সেই ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি মেলেনি সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো আর্থিক সহায়তা, পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। অর্থাভাবে ঘুরছে না সংসারের চাকা; পড়ালেখা বন্ধের পথে তাঁর দুই ছেলেমেয়ের।
রাজধানীর মগবাজারে বেসরকারি কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সিফাত। তাঁর বোন সায়মা আক্তার সিনথিয়া বিএএফ শাহিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সিফাত বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বাবা। মিছিলে গেলে অফিস থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন তিনি আমাকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট তিনি আমাকে নিরাপদে ফিরিয়ে উৎসর্গ করলেন নিজেকে। চোখের সামনে তাঁকে গুলি করে মারল পুলিশ। আমি শুধু আর্তচিৎকার করলাম। বাবার প্রাণের সঙ্গে উড়ে গেছে আমাদের মাথার ওপরের ছাদ। এখন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই দায়।’
নিহতের স্ত্রী শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী অস্থায়ী চাকরি করায় কোনো পেনশন বা অবসর ভাতা নেই। তাঁর মৃত্যুর পর কেউ এসে জিজ্ঞেস করল না, কীভাবে দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। ইতোমধ্যে বাসা ভাড়াও বকেয়া পড়েছে। টাকা দিতে না পারলে বাড়িওয়ালা কতদিন থাকতে দেবেন, জানি না। এমন কোনো সম্পদ নেই, যা বিক্রি করে আপদ কাটাব।  হত্যার বিচার চেয়ে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে।’
সাঁথিয়ার ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সাঁথিয়ার দু’জন শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আবদুল হান্নান। এই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। নিহতের তথ্য অনলাইনে ইনপুট দেওয়া হয়েছে। সরকার থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা এলে পৌঁছে দেওয়া হবে। 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×