জলাবদ্ধ ভবদহ
এক ঝুপড়িতে বসবাস পশু-মানুষের
বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও গোখাদ্যের তীব্র সংকট

রাস্তার ওপর টং ঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সঙ্গে থাকছে মানুষ। ছবি-সমকাল
নওয়াপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:১৭
যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ যেন শেষ হবার নয়। জলাবদ্ধতার চার মাসে কিছুটা কমলেও এখনও অনেকের ঘরে হাঁটু থেকে কোমরপানি। এসব পরিবার থাকছে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে। তাদের সঙ্গেই থাকছে গবাদি পশু। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও গোখাদ্যের তীব্র সংকট।
সরেজমিন দেখা যায়, ‘যশোর-খুলনাবাসীর দুঃখ’খ্যাত ভবদহের জলাবদ্ধ মানুষ রাস্তার ওপর টং ঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সঙ্গে থাকছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় পাওয়া যায় না বিশুদ্ধ পানি। শৌচাগারের অভাবে প্রাকৃতিক কাজ সারাও এক সংগ্রামের বিষয়। চার মাসের জলাবদ্ধতার কারণে ফুরিয়ে এসেছে গোখাদ্য।
চার মাস আগে ভারী বৃষ্টিতে ভবদহের অভয়নগর উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। উপজেলার চলিশিয়া, পায়রা, দিঘলিয়া, কোটা, প্রেমবাগ, ডুমুরতলা, আন্ধা, বেদভিটা, সুন্দলী, ডহর মশিয়াহাটিসহ কয়েক গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাড়িতে এখনও পানি। সচ্ছল পরিবারগুলো যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাঁশের সাঁকো তৈরির পাশাপাশি চলাচলে ব্যবহার করছে ডিঙি নৌকা। তবে দরিদ্র পরিবারগুলোকে থাকতে হচ্ছে গৃহপালিত পশুর সঙ্গে। সড়কজুড়ে ঝুপড়ির এক পাশে থাকছে গরু-ছাগল, অন্যপাশে চৌকি বানিয়ে রাতযাপন করছেন তারা। সেখানেই চলছে তাদের খাওয়া-দাওয়া। দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
বেদভিটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য প্রফুল্ল কুমার বলেন, এক দিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না। আমরা কীভাবে বাঁচব? এলাকায় খাওয়ার মতো বিশুদ্ধ পানি নেই। ৩-৪ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হয়। সেই পানি আনতেও লাগে নৌকা বা ভেলা।
আন্ধা গ্রামের শিক্ষক মিন্টু রায় প্রশ্ন রাখেন, বৃষ্টি হলেই পানিবন্দি হয়ে গরু-ছাগলের সঙ্গে আর কতদিন এভাবে তাদের থাকতে হবে? প্রশাসন কি কিছুই করবে না?
স্থানীয় সাংবাদিক প্রিয়ব্রত ধর বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ প্রায় সাড়ে তিন যুগ ধরে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
অভয়নগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহমুদুল আলা বলেন, সংকট নিরসনে গত মাসে জলাবদ্ধ এলাকায় ১০টি টিউবওয়েল, ৩০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপনসহ ১০ লিটার ধারণক্ষমতার ১০০টি কন্টেইনার এবং ১০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।