মাছে নাজেহাল ক্রেতা, চড়া সবজির দাম

বাঘার মনিগ্রাম বাজারে শনিবার মাছ বেচাকেনায় ব্যস্ত বিক্রেতা ও ক্রেতা সমকাল
আব্দুল লতিফ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী)
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৩
কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে দুপুরের খাবার বিক্রি করেন আনার আলী। আগে রান্নার পদে নিয়মিত পাঙাশ, তেলাপিয়া ও সিলভার কার্প মাছ রাখতেন। তবে এখন বাড়তি দামের কারণে এ মাছ দিতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। আনার আলীর ভাষ্য, মেস চালানো এখন অনেক কষ্ট। বাড়তি দামের কারণে ব্যয় বাড়ছে। খাবারের দাম বাড়ালে ক্রেতারা কিনতে চায় না। অন্য জায়গায় চলে যায়। আবার দাম না বাড়ালে লাভ থাকে না।
ক্রেতাদের অভিযোগ, দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক কিছু বদলালেও উল্টো চিত্র বাজারে। চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেটের কেবল মুখবদল হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে পকেট কাটছে ভোক্তার। আর মাছের বাজার অস্থির আগে থেকেই। লাগামহীন বাজারে দেশি মাছের পাশাপাশি স্বস্তি নেই পাঙাশ, সিলভার কার্প ও তেলাপিয়া মাছে। আর রুপালি ইলিশ যেন দেখেই শান্তি। মাছের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল অবস্থা নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চমধ্যবিত্ত সবারই।
গত বৃহস্পতিবার বাঘা পৌর বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক আব্দুল হানিফ বলছিলেন, ‘আগে জানতাম মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের পাতে প্রতিদিন মাছ ওঠাই দুষ্কর। বিশেষ করে ইলিশ কেনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সরেজমিন বাঘা, মনিগ্রাম, আড়ানিসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের মাছের দাম চড়া। প্রতি কেজি রুই ৩০০, কাতল ২৫০, ছোট দেশি শিং ৩০০, ঘেরের চিংড়ি ৭০০, চাষের কৈ ২২০, পাবদা-ট্যাংরা ৪০০, চাষের পাঙাশ ১৮০ ও তেলাপিয়া ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোয়াল, আইড়, দেশি শোল-কৈ মাছের দেখাই মিলছে না। মাঝেমধ্যে পাওয়া গেলেও দাম চড়া।
ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের মাছপ্রতি কেজি ১৫০০-১৬০০, ৫০০-৬০০ গ্রামের ১৩০০ ও ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, নদীর মাছের দাম আগে থেকেই চড়া। গত আগস্ট মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে মাছের।
বাঘা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মহসিন আলী বলেন, ইলিশ মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমছে। ফলে দাম বাড়ছে। আরেক ব্যবসায়ী ইনছার আলীর ভাষ্য, দেশি মাছের দাম আগে থেকেই বাড়তি। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সরবরাহ কমে গেছে।
যদিও ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে পর্যাপ্ত মাছ থাকলেও সংকটের কথা বলে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বস্তি মিলছে না সবজির বাজারেও। শিম-করলা ১২০ আর ফুলকপি ৮০ টাকা কেজি। তবে ৬০ টাকা হালির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। আর ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজার চলে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করেন। এর দায় পড়ে সব ব্যবসায়ীর ওপর।
বাজারে এসে সেই সিন্ডিকেটের কবলেই পড়তে হচ্ছে মন্তব্য করে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় হতাশার জন্ম দিয়েছে। অসাধু মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেকজনের কথায়, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত বাজার তদারকি ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তদারকির উৎপাদন খরচ কমিয়ে স্থানীয়ভাবে উদ্যোগী হতে হবে সরবরাহ বাড়াতে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে দাম নির্ধারণ করতে হবে। এতে স্বস্তি ফিরবে।
ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বরাবরই সুযোগসন্ধানী বলে মনে করেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। তিনি বলেন, তারা খোলস বদলেছেন, পদ্ধতি বদলেছেন। তারা পেছনে থেকে অন্য আরেকজনকে দিয়ে বাজারে সিন্ডিকেট করেন বা অপকর্ম চালান।
ইউএনও শাম্মী আক্তার বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার তদারক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে।
- বিষয় :
- মাছ