ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

পথে বসার শঙ্কায় শতবর্ষী হাটের কয়েকশ ব্যবসায়ী

পথে বসার শঙ্কায় শতবর্ষী হাটের কয়েকশ ব্যবসায়ী

খুলনার কয়রায় শতবর্ষী ঘড়িলাল হাট রক্ষার দাবিতে শনিবার মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী সমকাল

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:০৯

একটি বাঁধের কারণে পথে বসার শঙ্কায় পড়েছেন কয়েকশ ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে শতবর্ষী ঘড়িলাল হাট রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে এ হাট রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা। এই হাটের অবস্থান কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে।
মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী ঘড়িলাল এলাকায় ৩ হাজার ৬৬৫ মিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ কাজ করা হবে। এ কাজের নকশা অনুযায়ী ঘড়িলাল হাটের মাঝ বরাবর প্রায় ২০০ মিটার কাজ হবে। এতে বাঁধের দুই পাশে অন্তত দেড়শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকানঘর ভাঙা পড়বে। বাঁধের এ অংশের কাজ হাটের পেছন দিকের চর দিয়ে সামান্য ঘুরিয়ে করা হলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে রক্ষা পাবে শত বছরের ঐতিহ্যও।
প্রায় ১৫ বছর ধরে ঘড়িলাল হাটে স্যালুন চালান পবিত্র বিশ্বাস। পরিবারের পাঁচ সদস্যের খাওয়া-পরার একমাত্র অবলম্বন তার স্যালুন ঘরটি। উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শঙ্কিত তিনি। পবিত্র বিশ্বাস বলেন, ‘ওয়াপদার লোকেরা এসে মাপজোখ করার সময় দোকান ভাঙার কথা বলে গেছেন। দোকানটি ভাঙা পড়লে পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায় দেখছি না।’
ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বাপদাদার আমল থেকেই এই হাটে দোকান নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তিনি। এখন শোনা যাচ্ছে দোকান ভাঙা হবে। এই দোকান ভাঙলে আরেক স্থানে নতুন দোকানঘর বাঁধার সামর্থ্য নেই। তা ছাড়া জায়গা পাওয়াও কঠিন হবে।
বাজার কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ গাজীর ভাষ্য, এই হাটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রায় সাড়ে ৩০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। শত বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে বংশপরম্পরায় ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার হাট বসে। হাটবারে দূরদূরান্তের ব্যবসায়ী ও হাটুরের সমাগম ঘটে সেখানে। পাশের শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনও এই হাট থেকে বাজার-সদাই করে থাকেন। এই হাটের নামডাক অনেক আগে থেকেই। তিনি বলেন, এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ হোক তা সবাই চান। হাটের পশ্চিম পাশে কপোতাক্ষ নদের চরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও বাঁধ নির্মাণের নকশা করা হয়েছে হাটের মাঝ বরাবর। এ কারণে বাঁধের নকশা পরিবর্তন করে হাট রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাতক্ষীরা-২ বিভাগের আওতায় প্রকল্পের এ অংশে কাজ হবে ৩ হাজার ৬৬৫ মিটার। প্রায় ১২ কোটি টাকা চুক্তিমূল্যে জিআরসি-এসি (জেভি) নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এখনও সেখানে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বলেন, প্রকল্পের ৩ হাজার ৬৬৫ মিটার কাজের মধ্যে ঘড়িলাল হাটে ২০০ মিটারের মতো। দুই বছর আগে এ কাজের নকশা অনুমোদন করা হয়। স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই অংশের নকশা পরিবর্তনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

আরও পড়ুন

×