নিহত আলিফের গ্রামের বাড়িতে মাতম
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। ছবি: সংগৃহীত
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ০৭:১৭ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ০৭:২১
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নিহতের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। আলিফের মাসহ স্বজনরা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। ৩২ বছরের যুবক অ্যাডভোকেট আলিফকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার পরিবার। আলিফকে হারিয়ে সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর চোখে ঘোর অমানিশা।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে চালানো সংঘর্ষের সময় (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৮টায় লোহাগাড়া সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। লোহাগাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল থেকে অপরাধীদের বিচার দাবি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভকারীরা আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই স্লোগান দিতে থাকেন।
এছাড়াও নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বাড়ি লোহাগাড়া সদর সওদাগর পাড়ায়ও আত্মীয়স্বজন ভিড় করে। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের সঙ্গে তার বোন তারিনের বিয়ে হয় সাড়ে তিন বছর আগে।
তাদের তাজকিয়া নামের আড়াই বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তারিন এখন ৭ মাসের সন্তানসম্ভাবা। স্বামীকে সন্ত্রাসীরা জবাই করে হত্যা করেছে এ খবর শোনার পর হুঁশ হারিয়েছেন তারিন। তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তার সন্তানদের কী হবে এসব ভেবে তারিনের চোখে এখন ঘোর অমানিশা।
তিনি আরও বলেন, খুনিরা আমার বোনের জামাইকে অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি, নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নিহতের স্বজন ঈশা সাঈদী বলেন, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকায়। পুরো গ্রামজুড়ে মাতম চলছে, কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা। শোকে পাথর হয়ে বেহুঁশ হয়ে গেছেন নিহতের স্ত্রী।
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিতা জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, আমার ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সাইফুল ছিল ৩য় সন্তান। আমার ছেলে নামাজি, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিল, তাহাজ্জুদ নামাজও মিস করতো না।
আমার ছেলে এভাবে আমার আগে চলে যাবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। বিনা অপরাধে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্রজীবনে মেধাবী সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করতেন তিনি। প্রতিদিনকার মতো ঘটনার সময়ও আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আদালত ভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের জানাজা নামাজ নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে বুধবার বেলা ১১টায় এবং গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতিতে বাদ জোহর দ্বিতীয় দফা জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
- বিষয় :
- নিহত
- আইনজীবীর মৃত্যু
- সংঘর্ষ
- আদালত