সুরমার চরে সবুজের ছড়াছড়ি
সুরমা নদীর ঢালে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় তারা খুশি। সিলেট সদর উপজেলার পাইকারগাঁও এলাকায় তোলা ইউসুফ আলী
ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:২১
যেদিকে চোখ যাবে, নদীর তীরে সাজানো সবজি বাগান। কেউ করেছেন টমেটো, কেউ ফুলকপি বা বাঁধাকপির চাষ। ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে শিম ও লাউয়ের ক্ষেত। সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইল এলাকা থেকে দর্শা; প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জেগে ওঠা নদীর চরে চাষ করা হয়েছে শীতকালীন সবজি।
তবে কৃষকরা সবজি চাষ করেও শান্তিতে নেই। প্রকৃত কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। সার কিনতে হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে– এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বাড়ছে বলে মনে করেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিলেট জেলায় শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিন সদর উপজেলার কান্দিরগাঁও ইউনিয়ন, টুকের বাজার ইউনিয়ন ও মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সুরমা তীর এখন সবজিতে পরিপূর্ণ। বর্ষায় সুরমা নদী থাকে পানিতে টইটম্বুর। শীতে জেগে ওঠে চর।
বলতে গেলে বছরের ছয় মাস থাকে নদীর নিচে; ছয় মাস দু’ফসলা সবজি চাষ করেন এলাকার স্থানীয় কৃষকরা। সুরমার জেগে ওঠা চরের ঢালে আবাদ বাদ যায়নি এবারও। চারদিকে সবুজের সমারোহ।
গত সোমবার সকালে ইনাতাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সুরমা থেকে শ্যালো মেশিনে পানি তুলছিলেন কয়েকজন। সেই পানি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। নদীর ঢালে চাষ করা টমেটো ক্ষেতে পানি ঢালছিলেন মঞ্জু মিয়া। তিনি বলেন, যার জমির নিচে নদীর ঢাল, তিনিই মালিক। কেউ আবার চাষ না করে বর্গা দেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও তালবেগুনের চাষ করেছি। এগুলোর ফলন শেষ হলে পাট শাক, লাল শাক ও ডাঁটা শাকের চাষ করা হবে।
কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী, বাসিয়াখাই, অনন্তপুর, পাইকারগাঁও, খানুয়া, রাজিয়াবাড়ি ও শ্রীপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। নদী থেকে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হচ্ছে সবজি ক্ষেতে।
পাইকারগাঁও গ্রামের চাষি সুজন মিয়া, হাসিম আলী, আকবর হোসেন, আবদুর রহমান, মঞ্জু মিয়া, গেদন মিয়াসহ অনেককে দেখা যায় ক্ষেতে কাজ করতে। কেউ মাটি সমান করছেন, কেউ ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। তারা জানান, সবাই সরকারের তালিকাভুক্ত চাষি। প্রতিবছর তারা এই এলাকায় সবজি চাষ করেন। শীতে নদীর পানি একেবারে নিচে নেমে যায়। তখন ছয় মাস নদীর চরে সবজি চাষ করেন তারা।
তাদের ক্ষোভ, তালিকাভুক্ত চাষি হয়েও সার পান না। তালিকার বাইরে থাকা চাষিদের কাছ থেকে তাদের সার কিনতে হয় বেশি দামে। এ কারণে তাদের সবজি চাষ করে বিক্রি করতে হয় বেশি দামে। সারের দাম বাড়ার কারণে সবজির দাম বাড়ছে বলে জানান সুজন মিয়া।
পাশেই আরেক কৃষক হাসিম মিয়া জানান, তাঁর ৮০ শতাংশ জমিতে এবার ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ করেছেন। সরকার নির্ধারিত এক কেজি ইউরিয়া সার ২৭ টাকা। অথচ তাদের কিনতে হয়ে ৩২ টাকা দরে। একইভাবে টিএসপি কিনতে হয়েছে ৩২ টাকায়। ২১ টাকার ডিএপি কিনতে হয়েছে ২৫ টাকা দিয়ে। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে তারা সঠিক দামে সার কিনতে পারছেন না। তালিকাভুক্ত কৃষক হয়েও তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে তাদের সার কিনতে হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কৃষকদের সঠিক দামে সার দেওয়ার আহ্বান জানান এ কৃষক।
কয়েকজন কৃষক জানান, যারা চাষি সেজে সার কিনে নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে কেনার কারণেই এখন অনেক প্রকৃত চাষি সবজি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা না থাকলে সবজির দাম আরও কমে যেত।
সিলেটের কৃষি কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান সমকালকে বলেন, এ বছর ৩৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নদীপাড়ের ঢালু জমি নিয়ে আলাদা কোনো জরিপ হয়নি।
- বিষয় :
- সবজি