নির্মাণের ৪ বছরেও চালু হয়নি সিরাজগঞ্জের ট্রমা সেন্টার
ট্রমা সেন্টার
আমিনুল ইসলাম খান রানা, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:২৫
সিরাজগঞ্জ সদরে মুলিবাড়ি রেলক্রসিং ঘেঁষে চার বছর আগে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল ট্রমা সেন্টার। মূলত ঢাকা-রাজশাহী-রংপুর মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদায় স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কারিগরি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জনবলের অভাবে চার বছরেও প্রতিষ্ঠানটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় এরই মধ্যে চুরি হয়ে গেছে হাসপাতালের অনেক যন্ত্রপাতি, ট্রান্সফর্মার।
অভিযোগ আছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সময় সরকারি অর্থ লুটপাট ও নয়ছয়ের পরিকল্পনায় ২০২০ সালে তড়িঘরি করে নির্মাণ করা হয় এ ট্রমা সেন্টার। অথচ এর জনবল নিয়োগে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের পাশে রেলের জমিতে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয়। হাজার কোটি টাকায় নির্মিত সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সম্প্রসারিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মহাসড়ক থেকে ১৫-২০ মিনিটের পথ। সরকারি এ দুটি হাসপাতালেই বহু আগে থেকে জনবল ও মানসম্মত চিকিৎসার ঘাটতি রয়েছে। ফলে এ দুটি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ ও সেবার মান উন্নত না করে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন ওঠে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল কায়েস বলেন, সরকারি অর্থ লুটপাটের মহাপরিকল্পনায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সময় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও কামারখন্দে ডজনখানেক হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সদরের মুলিবাড়ির ট্রমা সেন্টার ও কামারখন্দের চৌবাড়িতে ২০ শয্যার হাসপাতালসহ কমপক্ষে ১০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হলেও জনবলের অভাবে চালু হয়নি। শাহজাদপুরের জামিরতায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যা হাসপাতালটির নির্মাণকাজে গড়িমসি রয়েছে। জেলা সদরের মধ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাগবাটি ২০ শয্যার হাসপাতাল, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টার থাকতেও সিরাজগঞ্জের মানুষ কাঙ্ক্ষিত মানের সেবা পাচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের সম্প্রসারণ হলেও পুরোপুরি ব্যবহার হয়নি। এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিধিবহির্ভূতভাবে ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক পিডি কৃষ্ণ কুমার পালের বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলা রয়েছে। যেসব আসবাব, যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই রোগীদের সেবায় আসছে না। লুটপাটের টাকাও উদ্ধার করা হয়নি।
সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির সাবেক নেতা নব কুমার কর্মকার বলেন, উদ্দেশ্য মহৎ হলেও জনবল নিশ্চিত না করে ট্রমা সেন্টার ভবন নির্মাণ সরকারি অর্থ অপচয়ের শামিল।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির রায়হান বলেন, চার বছর আগে ট্রমা সেন্টার ভবন হস্তান্তর হলেও চালু হয়নি। ২০ লাখ টাকার ট্রান্সফর্মারসহ অন্যান্য মাল সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রান্সফর্মার দুইবার চুরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে সরকারি অর্থের অপচয় হয়তো রোধ হতো।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমীন বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেই ট্রমা সেন্টারে জনবলের চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি দিয়েছি। জনবল না পেলে প্রতিষ্টানটি চালু করা সম্ভব না।
এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরের ফোনে বারবার কল এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো
সাড়া মেলেনি।
- বিষয় :
- ভবন নির্মাণ