‘শীত শুরু হইলে আমার দিনকাল বালা চলে’
হালুয়াঘাটে শীতের পিঠা বিক্রি করছেন এক মৌসুমি ব্যবসায়ী সমকাল
হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:৩১
‘শীত শুরু হইলে আমার দিনকাল বালা (ভালো) চলে। শীতের সময় পুলাপান (ছেলে-মেয়ে) লইয়া বালামন্দ কিন্না খাইতাড়ি।’ কথাগুলো বলেন, বাট্টা বাজারের পিঠা বিক্রেতা কাশেম মিয়া। তাঁর বাড়ি হালুয়াঘাট উপজেলার জামবিলের এলাকায়।
কাশেম মিয়ার এক ছেলে, এক মেয়ে। দুই সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে। ছেলের ঘরে দুই সন্তান। তাদের সংসার কোনোমতে চলে। মেয়ে তাঁর স্বামীর বাড়িতে। কাশেম মিয়া বলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী বাড়িতে থাকি, বুড়া-বুড়ির সংসার। সারাবছর ঝালমুড়ি বেছি (বিক্রি) করি। কোনো মতে সংসার চলে। শীতের সময়ে ম্যাড়া, চিতই, ভাপা পিঠা বেইচ্ছা আমার প্রতিদিন আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই টাকা দিয়া মনেরমতো বাজার সদাই কিন্না খাই।
হালুয়াঘাট উপজেলার অলিগলি, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেন
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের বাহারি সব পিঠাপুলি নজর কাড়ছে। পড়ন্ত বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম পড়ে।
শীত মৌসুমে বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর আয়োজন গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজন এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ব্যস্ততা ও পারিপার্শ্বিক সমস্যায় নিজের হাতে পিঠা তৈরির আয়োজন কমে গেলেও পিঠাপ্রীতি ও ভোজন থেমে নেই। মানুষ এখন দোকানের পিঠার ওপর নির্ভরশীল।
হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে চিতই পিঠা খেতে আসা বাসচালক নূরে আলম তুহিন বলেন, ‘বাল্য বয়সে শীতের সময় চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, এখন তা দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। সড়কের পাশে পিঠা বিক্রি হওয়ায় পিঠা খাওয়ার সেই সুযোগে কিছু অনুভূতি পাওয়া যায়।’
বাট্টা বাজারে পিঠা খেতে আসা ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি সারোয়ার হোসেন জানান, বাড়িতে পিঠা খেতে মন চাইলেও সহজে তৈরি করে দিতে পারে না। এখানে এসে সহজে পাওয়া যায়, পিঠা সুস্বাদুও অনেক।
হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে পরিবার নিয়ে ভাপাপিঠা খেতে দেখা যায় মুখলেছুর রহমানের পরিবারের পাঁচজনকে। মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে পিঠা বানাতে অনেক সময়ের ব্যাপার। একটু আগে মন চাইল সবাইকে নিয়ে চলে আসলাম পিঠা খাইতে। বাড়ির পিঠার মতোই সুস্বাদু।’
হালুয়াঘাট উপজেলার সামনে পিঠা বিক্রেতা সেকান্দর মিয়া জানান, প্রতিদিন ৮-১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। এতে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হচ্ছে তার। সেকান্দরের চিতই পিঠার জন্য নেন ১০ টাকা। আর ভাপা পিঠা ২০ টাকা। চিতই পিঠার সঙ্গে শুঁটকি, মরিচ, শর্ষে ভর্তা থাকে।
হালুয়াঘাট প্রেস ক্লাবের সামনে পিঠা বিক্রেতা আব্দুস সালামের ভাষ্য, বছরের এই সময়ে শীতের পিঠা বেশি বিক্রি হয়। বর্তমানে চিতই ও ম্যাড়া পিঠা তৈরি করছেন। এই ব্যবসায় আগে ভালো লাভ পাওয়া গেলেও এখন সবকিছুর দাম অতিরিক্ত হওয়ায় লাভ তেমন নেই। তবে যা উপার্জন হয়, তাও একেবারে কম না।
হালুয়াঘাট উপজেলার নতুন বাসস্ট্যান্ডের পিঠা বিক্রেতা হান্নান মিয়া বলেন, ‘দিনে মানষের (মানুষের) কৃষিজমিতে কাজ করি। শীতের সময় সন্ধ্যা হলে পিঠা বিক্রি করি।’ এই পেশায় কত দিন ধরে আছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে এখানে পিঠা বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২০০-২৫০ পিস পিঠা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা লাভ হয়। এতে আমার সংসার ভালোই চলে।’
- বিষয় :
- পিঠা উৎসবে হামলা